বগুড়ায় নিহত ‘জঙ্গি’ খালেদের জন্ম ও বেড়ে উঠা দিনাজপুরে শুধু পিতার সূত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জের

বগুড়ার  শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামের নয়লাপাড়া মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সদস্য বদর মামা ওরফে খালেদকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উল্লেখ করে বগুড়া পুলিশের দেয়া তথ্যকে ঘিরে সোমবার দিনভর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মীরা খালেদ অনুসন্ধানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে খালেদ সর্ম্পকে বেরিয়ে এসেছে চঞ্চল্যকর তথ্য। দরিদ্র পরিবারের সন্তান বদর খালেদের পিতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের হলেও সে বেড়ে উঠেছে দিনাজপুরে। ২৬ বছর ধরে ছেলের সঙ্গে ছিলনা পিতার কোন সর্ম্পক।
অনুসন্ধানের জানাগেছে, বদর খালেদের পিতার নাম এনামুল হক। এনামুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারায়ণপুর গ্রামের মৃত কোন্দল আলীর ছেলে। ১৯৮৫ সালের দিকে এনামুল হক দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার গোলনুরপুর গ্রামে চলে যান। সেখানে চাচাদের সঙ্গে তামাক চাষ কাজ করে জীবিকা শুরু করেন। ওই সময় বোয়ালিয়া গ্রামের লুৎফর রহমান লুথুর মেয়ে যুবেলা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় এনামুল হকের। বিয়ের প্রায় ৫/৬ বছরের মাথায় পারিবারিক কলোহের জের ধরে যুবেলার সাথে এনামুল হকের বিচ্ছেদ ঘটে। এরই মধ্যে জন্ম নেয় তাদের সন্তান খালেদ। আজকের জেএমবি সদস্য বদর মামা @ খালেদ। বিয়ে বিচ্ছেদের পর এনামুল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফিরে চলে আসে। দিনাজপুরে থেকে যায় তালাকপ্রাপ্তা যুবেলা ও শিশু খালেদ।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফিরে এসে এনামুল বসতি স্থাপন করেন নাচোল উপজেলার হামিদপুর গ্রামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাচোল সড়কের ধারে খুপড়ি বাড়ি তৈরী করে সেখানে বসবাস করতেন এনামুল। এ সময় তিনি নাচোলের খেসবা গ্রামের মৃত হাসান আলীর মেয়ে যুবেদা বেগমকে বিয়ে করেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাস্তার পাশে সরকারী জায়গার উপর তাদের বাড়ি উচ্ছেদ করা হলে এনামুল আশ্রয় নেন খেসবা গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে। এখানে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় দু’টি কন্যা সন্তান। যার একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে এবং অপরটি নাচোল ডিগ্রী কলেজে লেখাপড়া করেন।
বন্ধুক যুদ্ধে নিহত বদর খালেদ বেশ কয়েক বছর আগে একবার নাচোলে এসেছিল। একদিন পিতার সঙ্গে দেখা করে চলে যায়। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে খালেদ বেড়ে উঠেছে দিনাজপুরের গোলনুরপুর ও পরবর্তীতে বোয়ালিয়া গ্রামের মামার বাড়িতে।
মামা’র বাড়িতে বড় হওয়া খালেদের জেএমবি নামও হয়েছে বদর মামা ওরফে খালেদ।
নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে ঠাকুরগাও জেলার হরিপুর থানায় অস্ত্রসহ আটক হওয়া জেএমবি সদস্যদের স্বিকারোক্তি অনুযায়ী খালেদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তিনি বলেন, ‘ খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার সর্ম্পকে আমরা অনুসন্ধান করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুজে পায়নি’।
পুলিশ জানায়, বন্ধুকযুদ্ধে খালেদ নিহত হবার পর তার পিতা এনামুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, দিনাজপুরে মামা’র বাড়িতে লালিত খালেদ প্রায় ৩ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকায় বিয়ে করে।
খালেদ নিহত হওয়ার ঘটনার পর তার পিতা এনামুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, ‘২৬ বছর ধরে আমার সঙ্গে তার কোন সর্ম্পক নেই। কাজেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রহণ করার প্রশ্নই আসেনা। পিতা হলেও আমি তার লাশ গ্রহণ করবো না’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৯-০৮-১৬

, ,