গম কেনার সভাই হয়নি, তবুও ফড়িয়াদের কাছে ডিও বিক্রির সংবাদ! গোলাম রাব্বানীর চ্যালেঞ্জ ‘প্রমাণ করলে এমপিত্ব বাদ দিয়ে দিবো’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ এক আসনের সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার বেশ আয়োজন করেই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। শিবগঞ্জের কানসাট পুকুরিয়ায় তার বাসভবনের সামনে শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদিক সম্মেলনে তিনি খোলামেলা কথা বলেন শিবগঞ্জের আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থা, কোন্দল, পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের দাবিতে দেয়া ডিও এবং তাকে ঘিরে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে। ওই সংবাদ সম্মেলনে ফুটে উঠে শিবগঞ্জ আওয়ামীলীগের অভ্যান্তরিণ কোন্দলের চিত্রও। 
সংসদ গোলাম রাব্বানীর পক্ষে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাম রাব্বানী বলেন, শিবগঞ্জের একটি চক্র তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। কতিপয় সাংবাদিক অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক যুগান্তর ও এর সাংবাদিক আনু মোস্তফার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘ সরকার দেশব্যাপি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিবগঞ্জেও গম কেনার কথা রয়েছে। কিন্তু গম কেনার ব্যাপারে একজন উপদেষ্টা হিসেবে কোন চিঠি আমি পেলামনা, গম কেনার জন্য উপজেলা ক্রয় কমিটির কোন মিটিংই হয়নি। অথচ আমার বিরুদ্ধে সংবাদ লেখা হল যে, ‘ ফড়িয়াদের কাছ থেকে গোলাম রাব্বানী টন প্রতি দু’ হাজার টাকা করে নিয়ে লুটপাট করছে’। তিনি প্রশ্ন করে বলেন,‘ সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশন করবেন। কিন্ত তা কেন হবে একপেশে। তিনি বলেন, আমার কোন বক্তব্য না নিয়েই ওই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে যা আমার অধিকারকে ক্ষুন্ন করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কোন ফড়িয়াদের কাছে থেকে টন প্রতি দু’ হাজার টাকা নেয়ার কোন প্রমাণ দিতে পারলে আমি এমপি থেকে বরখাস্ত হয়ে যাবো। কোনই কথা বলবো না’। 
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য বিষয়ে আমরা তিনজন এমপি একসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের জন্য ডিও দিয়েছিলাম। সেখানে সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদও স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু পরে বলা হয়েছে আগের স্বাক্ষর জাল। আসলে আগের স্বাক্ষর আর পরের স্বাক্ষর মেলালেই প্রমাণ হবে তিনি আমাদের সঙ্গেই স্বাক্ষর করেছিলেন। 
তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের ভেতর থেকে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহাদাত হোসেন খুরমনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘ মনোনয়ন বঞ্ছিত হয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক গুটি কয়েকজনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন’। তিনি জানান, যতই ষড়যন্ত্র হোকনা কেন দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজ করে যাবেন।  
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়,  ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী পর্যন্ত যে শিবগঞ্জ উপজেলা সন্ত্রাস ও মানুষ খুনের জনপদ নামে খ্যাতি অর্জন করেছিল সে শিবগঞ্জ আজ অনেকটা শান্তির জনপদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। 
তিনি দাবি করেন, এক সময় শিবগঞ্জের মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে পারছিল না। কিন্তু বর্তমানে মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে। 
সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামীলীগের একটি স্বার্থন্বেষী মহল নিজের স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য দলের মধ্যে লবিং গ্রপিং করার চেষ্টা করছে এমনকি তারা নেত্রীর কাছে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে নানা ধরণের অভিযোগ করতে আছে।  যে অভিযোগগুলির স্বাক্ষর পর্যন্ত জাল করেছে।   
তিনি জানান, এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শিবগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামীলীগকে শক্তিশালি ও সুসংগঠিত করতে কাজ করে চলেছেন। অথচ জামায়াত বিএনপি’র একের পর এক তান্ডবের সময় সংগঠনের অনেক বড় বড় নেতা কর্মীদের মাঠে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে নিরাপদে চলে গেছিলেন এবং সংগঠনকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে শিবগঞ্জ আওয়ামীলীগ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। 
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিনোদপুর কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল  আমিন,  কানসাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বেনাউল ইসলাম, বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি দেলওয়ার হোসেন, পৌরআওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক  কারিমুল ইসলাম রাজেন, থানা যুবলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাঃ জুম্মা, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি তোহিদুল আলম টিয়া সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আসাদুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক ও সফিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ১৫-০৪-১৫

,