প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাময়িকী পরীক্ষারই প্রশ্নপত্র ফাঁস ! উদ্বিগ্ন অভিভাবক

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার একদিন অথবা দুইদিন আগেই শহরের বেশ কিছু ফটোকপির দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে প্রশ্নপত্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজেদের ‘প্রাইভেট বাণিজ্য’ ঠিক রাখতে বা কোচিং বাণিজ্যকারীদের প্ররোচনায় শিক্ষকরা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়াচ্ছেন। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ালেখার প্রবনতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে মেধার বিকাশ।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একযোগে শুরু হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো উপজেলা ভিত্তিক অভিন্ন প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার আগেরদিন বা দুইদিন আগেও প্রশ্নপত্রের ফটোকপি বিক্রি হচ্ছে। শহরের বেশ কিছু ফটোকপির দোকানে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে প্রশ্নপত্র। সোমবার বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সকালেই চাঁপাইনবাবগঞ্জনিউজ ডট কমের হাতে আসে গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ফটোকপি। একজন শিক্ষানুরাগি তরুন একটি ফটোকপির দোকান থেকে প্রশ্নপত্রটি সংগ্রহ করেন। এ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, সেটি আসল প্রশ্নপত্রেরই ফটোকপি। এসময় জানা যায়, হীন লাভের আশায় শিক্ষকদের প্রশ্ন ফাঁসের মতো ন্যাক্কারজনক কর্মকা-ের তথ্য। নিজেদের প্রাইভেট বাণিজ্য ঠিক রাখতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শহরে গজিয়ে উঠা কোচিং সেন্টারগুলোর প্ররোচনায় বা অর্থেও বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন শিক্ষকরা। অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রত্যেকটি উপজেলায় গঠিত শিক্ষা কমিটি সংশ্লিষ্ট উপজেলার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করে। সেই প্রশ্নপত্র এক সপ্তাহ আগেই পাঠানো হয় বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে। আর এই সুযোগে শিক্ষকরা ফাঁস করে দিচ্ছেন প্রশ্নপত্র। এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষকরা মূলতঃ প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য ঠিক রাখতেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ান। প্রয়োজন মতো না পড়িয়েই প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর পাইয়ে দিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। এছাড়া এমনও অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে কোচিং সেন্টারগুলোর কাছে প্রশ্নপত্র তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকরাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক জানালেন, প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাইরে থেকেও সংগ্রহ করেছেন তিনি। আবার তার মেয়ের গৃহ শিক্ষক যে সাজেশন দিয়েছেন সেটার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে গেছে।
প্রশ্নপত্রের হুবহু কপি দেখে একটুও অবাক হলেন না শহরের স্বনানধন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এটি এখন আর নতুন কিছু নয়। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঘটছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। বিষয়টি উদ্বেগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের এমন অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে কখনো কখনো নিজেকে শিক্ষক ভাবতেই লজ্জা পান তিনি।
নবাবগঞ্জ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফুল হক জানান, অতি সত্ত্বর প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় শর্টকার্ট খুঁজতে গিয়ে মেধাশুন্য হয়ে পড়বে নতুন প্রজন্ম। তিনি জানান, শ্রেণীকক্ষের পরীক্ষায় ন্যুনতম নম্বর পেয়ে পাশ করতে পারেনা এমন শিক্ষার্থীও সাময়িক পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ নম্বর পায় আগেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার কারণে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনা প্রবণতা একেবারেই কমে যাচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে মারুফুল ইসলাম বলেন, সৎ শিক্ষকদের নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটির প্রস্তুত করা প্রশ্নপত্র পরীক্ষার দিন পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে। দূরের বিদ্যালয়গুলোর প্রশ্নপত্র আগেরদিন নিয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ খান জানান, এই বিষয়ে কেউ তাঁর কাছে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক পর্যায়ে তিনি প্রশ্নপত্রের ফটোকপি সরবরাহকারীকে কেন তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি -এমন পাল্টা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৭-০৪-১৫

,