ভারতে ফিরে গেলেন বিএসএফের পুশ-ইন করা অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের পুশইনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেপ্তার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন দীর্ঘ ৫ মাস পর অবশেষে তার নিজ দেশে ভারতে পাঠানো হয়েছে। এসময় তার সঙ্গে ফিরেছেন ৮ বছর বয়সী ছেলে সাব্বির শেখ। তবে একই সঙ্গে গ্রেপ্তার অপর চারজনকে গ্রহন করেনি বিএসএফ।
শুক্রবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
ভারতীয় দুই নাগরিক হস্তান্তের সময় রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকশিনার মনোজ কুমার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ, ভারতের ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক ফাওয়ান রানাসহ দুই দেশের পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হস্তান্তের শেষ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এরফলে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও এক শিশুকে পুশইন করায় সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে। উভয় দেশের সম্মতিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোনালী খাতুন ও তার ছেলে সাব্বির শেখকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলো'। তবে প্রতিশ্রতি দিলেও সোনালী খাতুনের স্বামী দানিশ শেখসহ (২৮) একই এলাকার সুইটি বিবি (৩৩) ও তার দুই সন্তান, মো. কুরবান দেওয়ান (১৬) ও মো. ইমাম দেওয়ানকে (৬) গ্রহন করেনি বিএসএফ।
এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী একরামুল হক পিন্টু জানায়, ১ ডিসেম্বর শুনানি শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল ইসলাম ৪ ভারতীয়র জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়ার পর ওই রাতেই তারা জেলা কারাগার থেকে বের হয়ে আত্মীয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়াগোলা এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেনের বাড়িতে উঠেছিলেন। তবে দেড় ঘণ্টা পরই পুলিশ আবারও তাদের হেফাজতে নেয়। পরে ২ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে তাদের আবার ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই নয়াগোলায় তারা অবস্থান করছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসীম ফিরোজ বলেন, 'বিজ্ঞ আদালত ৬ ভারতীয় নাগরিককে ফারুক নামে স্থানীয়
এক আত্মীয় কাছে জিম্মায় দিয়েছিলেন। আদালতের আরেকটি নির্দেশনা আছে ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো। তারই আলোকে দুইজনকে ফেরত প্রদান করা হয়েছে। যে চারজন আছে আমরা আবার ফারুক কাছে দিয়ে দিবো'।
উল্লেখ, ‘বাংলাদেশি’ তকমায় দু’টি পরিবারের এই ৬ নাগরিক দিল্লীতে কাজ করার সময় গত ২৪ জুন পুলিশের হাতে আটকের পর বিএসএফ তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করে ২৬ জুন। কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে পুশইন হওয়া এই ৬ ভারতীয় নাগরিক প্রথমে ঢাকা তারপর চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে অবস্থান করছিলেন। গত ২০ আগষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আলীনগর ভুতপুকুর এলাকা থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের আটকের সময় সোনালী বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়াগোলা এলাকার ফারুক হোসেনের জিম্মায় ৫ হাজার টাকা বন্ডে আদালত তাদের জামিন প্রধান করেন। অবশেষে ৬ জনের মধ্যে সোনালী ও তার সন্তানকে ভারতে ফেরত পাঠানো হলে। বাকি ৪ জনের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ / নিজস্ব প্রতিবেদক / ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

