চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি< ৮ ঘন্টায় বৃষ্টিতে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত



চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে বাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। এতে ঘরের আসপারপত্র পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 
শুধু তাই নয়, এক টানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বৃষ্টিতে 
জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পানিতে ভেসে গেছে অনেক পুকুর। এতে মৎস্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, গত ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে একদিনে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলি মিটার, শিবগঞ্জ ১৭৫ মি.মি. গোমস্তাপুরে ১৮০মি.মি. নাচোলে ১৭৫ ও ভোলাহাটে ১৬৫মি.মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গড়ে জেলায় মোট বৃষ্টিপাতর রেকর্ড ১৯১ মিলি মিটার। 




জানা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সারাদিনই মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপরেই রাত সাড়ে ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারিবৃষ্টিপাত হতে থাকে। যা চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের নিউ মার্কেট, বালু বাগান, নিমতলা, অক্টোমোড়, ফুড অফিস মোড়, সার্কিট হাউজ মোড়, বাতেনখার মোড়, মাহাডাঙ্গা, রুহুল বাদ, কোট চত্বরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।এছাড়াও অতিবৃষ্টিতে ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। 



অন্যদিকে সদর উপজেলার হোসেনডাঙ্গায় এলাকায় একটি কালভাট, আলাতুলি ইউনিয়নে একটি কালভার্ট ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পাগলা নদীর উপর নির্মিত একটি কালভার্টসহ তিনটি কালভার্টের দু' ধারের মাটি সরে গেছে। যা চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

পৌরবাসীর দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকায় বিভিন্ন স্থানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় ও খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করা হয়েছে।  যার ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। একসময় এই জলাশয়গুলোই ছিল শহরের অতিরিক্ত পানি টেনে নেয়ার প্রাকৃতিক আধার। বিশেষ করে শহরের মহানন্দা বাসস্ট্যাণ্ড এলাকার কয়েকটি খাল ভরাট করা হয়েছে। যা দেখে বোঝায় উপায় নেই এখানে খাল ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার বেলেপুকুর বাসিন্দা বাবর আলী রুমন বলেন, অতিবৃষ্টির কারনে বেলেপুকুর এলাকায় আমাদের বাড়িসহ ১০০টি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।  যার মধ্যে প্রায় ৫০ টির বেশি বাড়িতে পানি ডুকে পড়েছে।
শহরের গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, সারারাত বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।বাড়ির সামনে হাটুপানি। সারা রাত পানির সাথে থাকতে হয়েছে। 



তাদের দাবি, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। এক সাথে অনেক ড্রেন হলেও কাজ শেষ না হওয়া দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর ফলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে। 
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম জানান, শহরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে হঠাৎ বৃষ্টিতে প্লাবন হবে না এবং শহরবাসী আর দুর্ভোগের মুখে পড়বে না।





এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে আমন ধান, সরিষা, আলু, পিঁয়াজ, মাসকালাই ও শাকসবজি ক্ষতি হয়েছে। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিদিরপুর এলাকার আমন ধান চাষী আমানউল্লাহ বলেন, আমার দুই বিঘা জমির ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা শুরু হতো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দুর্যোগের কবলে পড়ে অধিকাংশ ধান শেষ হয়ে গেছে। আরেক চাষী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি যে এই সময়ে এসে এত বৃষ্টি হবে।   
স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর রোপা আমন, ৩৭ হেক্টর আলু, ৯১৭ হেক্টর সরিষা, শাকসবজি ৩১৬ হেক্টর, ২৪৪ হেক্টর পেঁয়াজ, ২৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৬৮ হেক্টর ভূট্টা, ১৩ হেক্টর স্ট্রবেরি, ৩৭৯ হেক্টর রসুন। 
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে সেগুলো কিছুটা ক্ষতি হবে। এর পাশাপাশি শাক সবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে বা বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না।



এছাড়াও ভারিবৃষ্টিতে জেলায় প্রায় শতাধিক  পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে মৎস্য চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 
সদর উপজেলার বুলুনপুর এলাকার মৎস্য চাষী অলিউল্লাহ বলেন, আতাহার ও সাতনইল এলাকায় ২৫ থেকে ৩০ পুকুর অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে। আরেক মৎস্য চাষ রবিউল আউয়াল বলেন, কিছুদিন আগে বিলে কয়েক লাখ টাকার মাছ ছাড়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টির করনে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  আমাদের মহাডাঙ্গা বিলসহ আশপাশের প্রায় ১৫টি পুকুর বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। 

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ / নিজস্ব প্রতিবেদক / ০১ নভেম্বর ২০২৫