“ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন”




ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশা দ্বারা সংক্রমিত হয়। বর্ষার সময় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে সারাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে মনে রাখতে হবে, সাধারণ চিকিৎসায় ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ও এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম মারাত্মক হতে পারে। 
ডেঙ্গু ভাইরাস ও বাহক মশা :
ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টা সেরোটাইপ আছে। DENV-1, DENV-2, DENV-3,  DENV-4|  এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়। এডিস মশা সাধারণত পরিত্যক্ত টায়ার, পাত্র, ডাবের খোসা, ফুলের টব, ড্রেনে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। 

লক্ষণ সমূহ:
ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশের কোনো লক্ষণ থাকে না। আর বাকিদের ক্ষেত্রে প্রকাশিত 

লক্ষণসমূহ হলোঃ 
# জ্বর: যা সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় যে কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চোখের পিছনে ব্যথা।
# ঘাড়, পিঠ ও মাংসপেশীতে ব্যথা।  
# অস্থিসন্ধি বা হাড়ে ব্যথা। 
# খাবারের অরুচি ও স্বাদের পরিবর্তন। 
# র‍্যাশ- জ্বর থাকাকালীন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে মুখ, গলাসহ বুকের ওপরের অংশ লাল হয়ে যেতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধানত হাত ও পায়ের পাতায় লালচে দাগের মত হয়, যেগুলো গুটি আকারেও দেখা দেয়। এগুলোকে “ম্যাকুলোপ্যাপুলার র‍্যাশ” বলা হয়। এগুলো ধীরে ধীরে শরীরের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
#  ডেঙ্গুতে কোন র‍্যাশ খারাপ:
 ডেঙ্গুতে অনুচক্রিকা কমে গিয়ে চামড়ার তলায় প্রথমে গাঢ় লাল, তারপর ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যাওয়া র‍্যাশ হলে এটা খারাপ লক্ষণ। এক্ষেত্রে দেরী না করে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। 

# হেমোরেজিক লক্ষণ সমূহ:
চামড়ার নিচে রক্তপাত, নাক দিয়ে রক্ত যাওয়া, মাসিকের রাস্তা বা খাদ্য নালী দিয়ে রক্ত যাওয়া। 

 চিকিৎসা:  
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তবে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশের চিকিৎসা বাসাতেই সম্ভব। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসাতেই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হলে নিম্নোক্ত বিষয় খেয়াল রাখবেন। 
 পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
#  প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খান। যেমন: ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, লেবুর শরবত। পর্যাপ্ত শাক-সবজি ও ফলমূল খান। 
তবে যাদের নিম্নোলিখিত ওয়ার্নিং সাইনগুলো থাকবে অথবা যাদের ডেঙ্গু রোগের সাথে অন্য কোনো রোগ যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, স্থুলতা বা গর্ভবতী ও বয়স্ক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 

 ওয়ার্নিং সাইনগুলো হলো:
#  বমি
#  তীব্র পেট ব্যথা।
#  তীব্র দুর্বলতা, অবসাদ, রক্তপাত। 
#  বিগত ৬ ঘণ্টা যাবত কোনো প্রস্রাব না হওয়া।
 # কিছু কাজ বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যা ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে করা যাবে না। 
যেমন:- 
# জ্বর বা ব্যথার জন্য এসপিরিন বা ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া যাবে না। 
#  রক্তপাত বা উপযুক্ত নির্দেশ ছাড়া রক্ত বা প্লাটিলেট দেয়া যাবে না। 
#  এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। 
#  মাংসে ইনজেকশন দেয়া যাবে না। 
#  মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হলে দাঁত ব্রাশ পরিহার করতে হবে। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা: 
ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। বর্ষায় এরোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় বাড়ির আশে পাশের জমে থাকা  পানি ও বদ্ধ জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টবে পানি জমতে দেয়া যাবে না। অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে বা অ্যারোসল স্প্রে করতে হবে। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক- ডা. মো. মিনহাজুল ইসলাম
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।