গাছে গাছে মুকুল<চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক বছরে কমেছে ১০০ হেক্টর আম বাগান





গাছে গাছে মুকুলের দেখা মিলতে শুরু করেছে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আর কিছুদিনের ভিতরেই আম বাগানগুলো মুকুলে মুখলিত হবে। সেই সাথে সুবাস ছড়াবে ম-ম গন্ধে। 
দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে আম। প্রতিবছর এই জেলায় আমবাগান বৃদ্ধি পেলেও এ বছর ১২৯ হেক্টর আমবাগান কমেছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জে ১০০ হেক্টর এবং ভোলাহাটে ২৯ হেক্টর। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় আমবাগান বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ হেক্টর। ফলে গড় কমেছে ১০০ হেক্টর। তবে বাগানের সংখ্যা কমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে আমগাছের সংখ্যা। কারণ হচ্ছে, হাইডেনসিটি বা প্রতি হেক্টরে আমগাছের ঘনত্ব। 
বাগান মালিক ও আম চাষিরা জানিয়েছেন, এক বছর ভালো ফলন হলে পরের বছর কম ফলন হয়।  ফলনগত দিক থেকে স্থানীয়দের কাছে কমের বছর ‘অফ ইয়ার’ এবং ভালো ফলনের বছর ‘অন ইয়ার’ হিসেবে পরিচিত। গত  বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানে মুকুল ছিলো কম। ফলে আমের উৎপাদনও কম হয়েছিল। 
এদিকে শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার শতবছর বা তারও আগের বিশাল বিশাল আমগাছে ভালো ফলন না হওয়ায় বাগান মালিকরা সেইসব গাছ কেটে অন্য ফসল চাষাবাদ করছেন।



কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর মৌসুমের শুরুতে তাপমাত্রা কম থাকা এবং প্রাকৃতিকগতভাবে বেশি ফলনের বছরের পরের বছর অর্থাৎ কম ফলনের বছর হিসেবে গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুকুল এসেছিল মাত্র ৭০ থেকে ৭৩ ভাগ। যা তার আগে বছর ছিল প্রায় শত ভাগ। তবে চলতি বছরের আমগাছ গুলতে মুকুলে ভরে উঠবে এমনি আসা করছেন এখানকার আম চাষি ও বাগান মালিকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ৫ উপজেলায় আমবাগান ছিল ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর। এবার ১০০ হেক্টর কমেছে। গতবছর সদর উপজেলায় আমবাগান ছিল ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর। এবারো তাই আছে। অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলায় গতবছর ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান থাকলেও এবার ১০০ হেক্টর কমে রয়েছে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর। গোমস্তাপুর উপজেলায় গত বছর ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমবাগান থাকলেও এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ২৪০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। নাচোল উপজেলায় আমবাগান বেড়েছে ১৯ হেক্টর। গতবছর ছিল ৪ হাজার ৩৩১ হেক্টর, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টরে। ভোলাহাট উপজেলায় গতবছর আমবাগান ছিল ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর। এ বছর কমে দাঁড়িয়ে ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর। 
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বড় বড় আম বাগান ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ছোট ছোট আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছ গুলোতে তুলনামূলক ছোট আম গাছগুলোতে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। সেই সাথে আম বাগানজুড়ে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল পরিচর্যার কাজে। 
বরেন্দ্র অঞ্চলের আম চাষি মুনজের আলম মানিক জানান, মাঘ মাসেই মূলত মুকুল ফুটে যায় বেশি। ফাল্গুন মাসে মুকুল ভালো হয় না। গত বছর ফাল্গুনে মুকুল ফুটায় আম ভালো হয়নি। এবার অন ইয়ার হবে আশা করছি, মুকুল ভালো হবে এবং আমও ভালো হবে। এখন আমরা আমের বাগানে পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছি। যেগুলো গাছে মুকুল বের হয়নি আশা করছি কয়েকদিনের ভিতরে মুকুল বের হয়ে যাবে। 
বরেন্দ্র এলাকার ৩০ বিঘার আম চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, গত এক মাস থেকে আম বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে। ছোট গাছগুলোয় মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। এখন বালাই নাশক স্প্রে করা হয়েছে। 
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন-মুকুল ফোটার সময় সীমা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। তবে যদি ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা কমে গেলে মুকুল ফুটতে ব্যাহত হবে। যে কারণে গাছগুলো মুকুলিত হয় দেরিতে। তিনি বলেন-গতবছর যেসব ডালে মুকুল আসেনি সেসব ডালে এবছর আসবে। এটা কম বেশি হয়। আমা বাগান কমার বিষয়ে তিনি বলেন- কোনো এলাকায় বড় গাছগুলো কেটে ফেলে মাঠ ফসলে গেছেন বাগান মালিকরা। ফলে জেলায় ১০০ হেক্টর জমির আম বাগান কমেছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক / ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫