শিবগঞ্জের তর্তিপুরে মাঘী বান্নী গঙ্গাস্নান
শিবগঞ্জ উপজেলার তর্তিপুরে মাঘী বান্নী গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে চন্দ্র মাসের তারিখ হিসাবে প্রতিবছর রাজশাহী অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই উপজেলার তর্তিপুর এলাকায় পৌরণিক জাহ্নুমুনির আশ্রমের কাছে গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন।
জানা যায়, এ গঙ্গাস্নান অধিকাংশ বছরই মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে মাঘী বান্নী স্নান বলে। কিন্তু চাঁদের উপর নির্ভর করে কোন কোন বছর ফাল্গুন মাসেও গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের নাটোর, নওগাঁ এলাকা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরুষ-মহিলারা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, মিশুক, অটোরিকশা ও রিকশাসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন যোগে দূরদূরান্ত থেকে গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য পূর্বদিন থেকেই পৌরণিক জাহ্নুমুনির আশ্রমে আসতে শুরু করে।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের আসা অব্যাহত ছিল। সকলে স্থানীয় গঙ্গাস্নান পর্ব শেষ করে বিভিন্ন ধরণের ভুরি ভোজ করে থাকে। এই ভুরি ভোজের মধ্যে স্থান পায়, মূলত: শিবগঞ্জের বিখ্যাত চমচমসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন দ্রব্য, রাজারামপুর ও নসিপুরের দই, রহনপুরের মুড়ি ও চিড়া এবং ভোলাহাটের সাগর কলা। প্রায় মহিলারা বাড়ি ফেরার সময় নানা ধরণের মাটির পাত্রে সযতে গঙ্গার পবিত্র জল নিয়ে যায়। অনুষ্ঠানে আগত ৮৯ বছর বয়স্ক শান্তি দেবী নামে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে জানা যায়, সংগৃহীত এ পবিত্র জল সমগ্র বছর বাড়িতে রেখে বিভিন্ন পূজা পার্বনে ব্যবহার করে থাকে।
তর্তিপুর মহাশ্মশান ও গঙ্গাস্নান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমল কুমার ত্রিবেদী জানান, পৌরাণিক যুগ থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম র্তীর্থস্থান তর্তিপুর গঙ্গাস্নানে বিভিন্ন এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্নানকার্য সম্পন্ন করেন। এ স্নান করলে মানব জীবনের পাপমোচন ও অকল্যাণ দূর হয়। তিনি আরো বলেন, এ বছর প্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটেছে।
এদিকে এ উপলক্ষে দিনব্যাপী মেলায় প্রসাধনী, কাঠের আসবাবপত্র, হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন উপকরণ, মিষ্টি ও খাবার দোকান, পূজা এবং পালাক্রমে কীর্ত্তনের আয়োজন করা হয়। গঙ্গাস্নানকে ঘিরে গোটা তর্তিপুর এলাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে আগত হিন্দু মহিলারা বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র ক্রয় করে নিয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩