১১ দিন পর বন্ধ হয়ে গেল ‘ম্যাংগো ষ্পেশাল’ ট্রেন


আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমসহ সবজিজাতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য চালু হওয়া  ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ বন্ধ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শেষবারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম নিয়ে ঢাকা যায় ট্রেনটি। মাত্র ১১দিন চলার পর আলোচিত ট্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ জুন ২০২২ তৃতীয়বারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’র উদ্বোধন করা হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বড় ধরণের লোকসানের কারণেই ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ৫টি ৪৩ টনের  মালবাহী ওয়াগনের ট্রেনটির (২১৫ টন ক্যাপাসিটি সম্পন্ন) পরিচালন ব্যয় (অপারেটিং কষ্ট) ট্রেনটির আয়ের তুলনায় অনেক বেশী হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে করেনাকালে প্রথমবার ২০২০ সালে ট্রেনটি ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত চলাচল করে। দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল করে। ১৩ জুন ২০২২ তৃতীয়বারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ রহনপুরে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’র উদ্বোধন করা হলেও  রহনপুর রেলস্টেশন থেকে প্রথমবারের মত ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ টি উদ্বোধন করা হয়। তবে রহনপুর থেকে দ্বিতীয়বারের মত আম নিয়ে ট্রেনটি ঢাকায় যায়।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিবারই ভতূর্কি দিয়ে ট্রেনটি চালানো হয়। তৃণমুল চাষী, ব্যবসায়ী, বাগানী ও উদ্যোক্তাদের জন্য মূলত: ট্রেনটি চালানো হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ ব্যবসা সফল হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর ষ্টেশন পর্যন্ত ১৬টি ষ্টেশন  থেকে মাল পরিবহন করত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ হয় ১টাকা ৩১ পয়সা। রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত কেজি প্রতি ভাড়া হয় ১ টাকা ১৭ পয়সা। এর সাথে রয়েছে রেলের নিজস্ব কুলির জন্য পৃথক খরচ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ষ্টেশন সহকারী মাষ্টার ওবাইদুল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমের ১১ দিনে ট্রেনটি ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ৪৫ হাজার ৬২৪ কেজি আম পরিবহন করে। এতে আয় হয় ৬১ হাজার ৪৬৯ টাকা। গত ২০২১ সালে এই ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছিল ২৩৬.৯৭৩ টন। এর আগে গত ২০২০ সালে ট্রেন প্রথম চালুর বছরে ১৬৭.০৮২ টন আম পরিবহন করে।
ট্রেনের প্রারম্ভিক রহনপুর ষ্টেশন মাষ্টার মির্জা কামরুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে ট্রেনটি ষ্টেশন থেকে ২৯.৫৪৩ টন আম পরিবহন করে।
জেলার বৃহত্তম সদর উপজেলার আমনুরা জংশন মাষ্টার হাসিবুল হাসান বলেন, ট্রেনটি এ বছর ১৮২টি ক্যারেটে ৩.৭৭৪ টন আম পরিবহন করে আয় করে ৪ হাজার ৬৫৬ টাকা।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এবার  আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ফলন অনেক কম।  সেই সাথে ট্রেনটি আমের মৌসুমের অন্তত ৩ সপ্তাহ দেরী করে চালু করা হয়েছিল। অপরদিকে রাজশাহী  অঞ্চলে আমের ফলন তুলনামূলক ভাল হলেও সেখান থেকে ট্রেনের জন্য তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। টেনটির অব্যহত সিডিউল বিপর্যয়ও কাঁচামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করেছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটি সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, আমের ট্রেন ছাড়াও করোনার কারণে ২৭ মাস আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া জেলা থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ৫ জোড়া ট্রেন বন্ধ রয়েছে। সকল ট্রেন মালবাহী ওয়াগনসহ পুনরায় দ্রুত চালু করা হোক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৫ জুন, ২০২২