চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিলা বৃষ্টিতে ৭ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে আম ও বোরো ধানের ক্ষতি


চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচণ্ড তাপদাহের পর আকস্মিক দমকা বাতাসসহ শিলা বৃষ্টিতে আম ও বোরো ধানের ব্যাপক তি হয়েছে। রবিবার রাত ৮টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দমকা বাতাসসহ শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী এই শিলা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমের গুটি ঝরে পড়ে। এছাড়া বাতাসের কারণে েেতর বোরো ধান মাটিতে হেলে পড়ে।
এদিকে কৃষি বিভাগ বলছেন, জেলায় আংশিক ভাবে শিলা বৃষ্টিতে ৭ হাজার ৬শ’ ৪৬ হেক্টর জমিতে আমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ এই বৃষ্টিকে  আম ও ধানের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে দেখছেন। বৃষ্টির ফলে আমের গুটির ঝরে পড়া অনেকাংশেই কমে যাবে বলে জানান আম চাষি ও কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, সদর উপজেলার গোবরাতলা, বারোঘরিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, ইসলামপুর, সুন্দরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর, মনাকষা, দলর্ভপুর, কানসাট, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শিলা বৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলার আমচাষি সাদরুল জানান, কয়েক দিন থেকে তাপদাহ চলছে। এ সময় একটু বৃষ্টির দরকার ছিল। রোববারের বৃষ্টি আমের গুটির জন্য খুবই উপযোগী। কারণ বৃষ্টির পানি পেয়ে আমের গুটি এখন দ্রুত বাড়বে। তবে শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক তি হয়েছে। অনেক আম ঝরে পড়েছে।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খান শামীম বলেন, শিলা বৃষ্টির আকার খুব বড় নয়। কিন্তু আমের গুটিগুলো এখনো বড় হয়নি। তাই আমের বেশি তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানের পুরোপুরি এখন ফলন হয়নি। তাই খুব বেশি তি না হলেও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে মাটিতে নুইয়ে পড়েছে ধানগাছ। এতে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এমনকি ফলন কমে যাবে। তবে বৃষ্টির পানি এই মুহূর্তে ধানচাষের জন্য ভালোই হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ জানান, এই সময়ে একটি বৃষ্টি প্রত্যাশিত ছিল আমচাষিদের জন্য। বৃষ্টির ফলে আমের গুটির ঝরে পড়া অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে এ বছর এমনিতেই আমের ফলন কম। তার ওপর বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে যেমন আম ঝরে পড়েছে, তেমনি যে আমের ওপর শিলা পড়েছে, সে আম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমের ফলন আরও কমে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রবিবার রাতে শিলা বৃষ্টিতে আংশিক ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জের ৫ হাজার ৭শ’ ৯৫ হেক্টর আম বাগান, ১ হাজার ৫শ’ ৭৫ হেক্টর জমির বোরো ধান, ৫ হেক্টর ভুট্টা, ১ হেক্টর পাটের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলায় সম্ভাব্য ২৫ হাজার ৬৪৬ জন চাষির ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে ৫০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৮ এপ্রিল, ২০২২