নিরবে-নিভৃতে কাজ করা মানুষদের খুঁজে বের করে স্বীকৃতি ও সম্মাননা দিল প্রথম আলো


জেলার দুই কৃতি মানুষকে সম্মাননা, আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর ২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। রোববার বিকেল সোয়া চারটায় শহরের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। প্রথম আলো বন্ধুসভা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ওজিফা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে  স্বাগত বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী আব্দুস সামাদ ও নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শংকর কুমার কুন্ডু।
অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, দেশে যখন কার্যকর কোন বিরোধী দল নেই, তখন প্রকৃতপক্ষে সরকারের গঠণমূলক সমালোচনা করে প্রথম আলোই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষের জন্য নিরবে-নিভৃতে যে সমস্ত নিবেদিতপ্রাণ মানুষ কাজ করে যাচ্ছে তাঁদের খুঁজে বের করে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরাসহ স্বীকৃতি ও সম্মাননা জানাচ্ছে প্রথম আলো। এটি প্রথম আলোর একটি বড় কাজ।
কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধু সোনিয়া সিং। লালন সংগীত পরিবেশন করে বন্ধু অর্পিতা রওনক, জয়ীতা রওশন, আব্দুল মতিন। নজরুল সংগীত পরিবেশন করে বন্ধু দিগন্ত কুমার ঘোষ। নাচ পরিবেশন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক আরেফিন অপু ও প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালার সাংস্কৃতিক দল।


 অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিউজ্জামান, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মাযহারুল ইসলাম, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিঠুন কুমার ঘোষ, চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেন, নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিউল আজম, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, জাগো নারী বহ্নিশিখার আহ্বায়ক ফারুকা বেগম, সদস্য সচিব মনোয়ারা খাতুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা শফিকুল আলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার অর্থ সম্পাদক ও  বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে জেলার দুজন কৃতি মানুষকে সম্মাননা দেয়া হয়। তাঁরা হলেন নাচোল উপজেলার আলপনা গ্রাম টিকইলের দেখন বালা বর্মণ ও সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রী কলেজের গ্রন্থাগারিক আমিনুল ইসলাম। আলপনা গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বাড়িটি হচ্ছে দেখন বালা বর্মণের। তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় থেকে বাড়িতে আলপনা আঁকছেন। এখন তাঁর দুই মেয়ে ও নাতনিরাও তাঁর কাছ থেকে শিখে আলপনা আঁকছেন। গ্রামটিতে বহু বছর থেকে আলপনা আঁকার চল থাকলেও দেখন বালার মত দৃষ্টিনন্দন আলপনা আঁকত না কেউ। এখন দেখন বালার দেখাদেখি অনেকেই আকর্ষণীয়ভাবে আলপনায় রাঙিয়ে তুলেছেন তাঁদের ঘরবাড়ি। সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমন কি বিদেশ থেকেও আলপনা গ্রাম দেখতে যায় মানুষ।
সম্মাননা পেয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে দেখন বালা বর্মণ বলেন, গ্রামের আলপনা এবং আমাকে প্রথমবারের মত প্রথম আলোতেই তুলে ধরা হয়। প্রথম আলোতে একাধিকবার বিশেষ প্রতিবেদন ও আমার বাড়ির আলপনা নিয়ে দুই-তিন বছর আগে পহেলা বৈশাখে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে। আমিসহ গ্রামের নারীদের এ আলপনা আঁকার কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেয় প্রথম আলো। প্রথম আলোকে এজন্য প্রাণঢালা ভালোবাসা জানায়।
অন্যদিকে আমিনুল ইসলাম ২০ বছরেরও বেশি সময় থেকে গ্রামে-গঞ্জে দরিদ্র চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চোখের ছানি অস্ত্রোপচারে সাহায্য করে আসছে। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘পরোপকারী বিশেষ বন্ধু’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথম আলোর স্বীকৃতি পেয়ে আমি অনুপ্রাণিত। এ সেবামূলক কাজ আমি আজীবন চালিয়ে যাব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৭ নভেম্বর, ২০২১