দুর্দশার গল্প শুনে ৫৭ পরিবারকে দেয়া হলো গুচ্ছগ্রামে ঘর > জেলা প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ

প্রতি সপ্তাহের বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে জনসাধারণের সাক্ষাতের কর্মসুচি চালু ছিল। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়জুড়ে জেলা প্রশাসক জনগনের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনিক সেবা গ্রহণ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে আসা এই ‘সাক্ষাৎ’ কর্মসুচির পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ওই বুধবার বড় পরিসরে জেলা প্রশাসকের ‘সাক্ষৎ’ কর্মসুচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘গণশুনানী’ নামে। গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসনের এই নতুন উদ্যোগে অংশ নিয়ে প্রায় ১ শ জন নাগরিক বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা পেয়েছেন। এরমধ্যে ৫৭ জনকে গুচ্ছগ্রামে ঘর প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের  জেলা প্রশাসকে কার্যালয়ে নাগরিক সেবা প্রদানে মান ও গতি বৃদ্ধির লক্ষে গণশুনানী নামের এই আয়োজনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অসহায় মানুষ জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের কষ্ট, দুঃখগাঁথা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চৌহদিটোলা গ্রামের বৃদ্ধা রোসনা (৬০) তার কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ আমার স্বামী নেই, নেই কোন সন্তানও। আমি ও আমার এক বোন স্থানীয় একটি ধানের চাতালে কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করি। থাকতাম ওই চাতালের একপাশে একটি খুপড়ি ঘরে। চাতাল মালিক সম্প্রতি ওই খুপড়ি ঘরটি ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন নেই কোন থাকার যায়গা’। রোসনা’র এখন স্থান হয়েছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু পরিবারের ‘বৃদ্ধাশ্রমে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়ার গ্রাম পুলিশ শওকত আলী। মারা গেছেন ২০১৭ সালে। শওকত আলী যায়গায় কাজ করছেন তার ছেলে। কিন্তু এতোদিন পিতার মৃত্যুজনিত অর্থ এমনকি তার পারিশ্রমিকও পাচ্ছিলেননা।  নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের ডিমকোইল গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির বিসু হেমব্রমের পারিবারিক কবর স্থান দখল করে নিয়েছে স্থানীয় দখলদার। এমন প্রায় ১০টি অভিযোগটি গণশুনানীকালে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনার সমাধান পুর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
গণশুনানীকালে উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাশরুবা ফেরদৌস, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক উম্মে কুলসুম ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
গণশুনানীতে অংশ নেয়া সিংহভাগই মানুষই ছিলেন, ভূমিহীন, গৃহহীন ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ও প্রতিবন্ধি শিশুর অভিভাবক। এর মধ্যে ৫৭ জন ভূমিহীনকে গুচ্ছগ্রামে ঘরের ব্যবস্থা, কয়েকজন গৃহহীনকে ঢেউটিনসহ অর্থসহায়তা প্রদান, প্রায় ২০ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যাবস্থাসহ অর্থ সহায়তা প্রদান, ২৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া গণশুনানী চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক বলেন, ‘ নাগরিকদের সেবা প্রদানে জেলা প্রশাসকরা কাজ করে আসছেন তাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে। আগে সীমিত সময় ও সীমিত সংখ্যক লোকের কথা শোনা হতো এবং সেবা প্রদান করা হতো। এখন এই গণশুনানীতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসছেন তাদের অভাব অভিযোগ তুলে ধরছেন। বড় পরিসরে এই গণশুনানীতে সেবা প্রদানের ব্যাপ্তি বেড়েছে। ইউএনওরা কানেক্টেড থাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের উপস্থিতিতে মানুষও তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৭-১১-১৯