নব্য প্রতারক অমি ধারের নামে হাতিয়ে নিয়েছে ৫ কোটি টাকা > বাদ যায়নি সাবেক পৌর মেয়রও

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রসিদ্ধ কীটনাশক ব্যবসায়ী বাবার ব্যবসায়ীক সুনামকে পুজি করে এক অভিনব প্রতারণার জাল বুনেছিল তরুন তসিকুল ইসলাম অমি। মিষ্টভাষা আর কথার মায়াজালে জড়িয়ে ২০/২২ জনের কাছ থেকে ধারের নামে হাতিয়ে নিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। হাতিয়ে নেয়া টাকা নিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে আত্মগোপনে চলে যাওয়া অমি অবশেষে ধরা পড়েছে। তাও আবার আরেকজনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে গিয়ে নিজে ধরা পড়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। রবিবার সন্ধ্যায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ার (ফুড অফিস মোড় সংলগ্ন) কীটনাশক ব্যবসায়ী প্রয়াত আবুল কাশেম বিশ্বাসের ছেলে তসিকুল ইসলাম অমি পিতার রেখে যাওয়া কীটনাশক ব্যবসা করে আসছিল। বেশ ক’বছর ভালভাবেই ব্যবসা চালানোর পথেই হটাৎকরে বদলে যায় অমি। বাবার ব্যবাসায়ীক সুনামকে কাজে লাগিয়ে ধারের নামে পরিচিত জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে লাগে টাকা। কৌশলে পরিচিত জন ও প্রতিষ্ঠানকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। ওই সূত্র জানায়, গেল ৭/৮ মাসেই সে হাতিয়ে নেয় তিন কোটিরও বেশি টাকা।
শহরের অন্যান্য ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মালিক, বাসার ভাড়াটিয়া, নিজ দোকানের ম্যানেজার, বাবার বন্ধু এমনকি জনপ্রতিনিধির কাছ থেকেও হাতিয়ে নিয়েছে প্রচুর টাকা।
সূত্র জানায়, ‘নব্য প্রতারক’ তসিকুল ইসলাম অমি শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, একটি মটর সাইকেল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বাবু পোল্ট্রি ফিড, আবদুর রহিম, আবদুস সবুরসহ কয়েকজনের কাছ টাকা নিয়ে আত্ম গোপনে চলে যায়। এদের মধ্যে কারো কাছ থেকে ২২ লাখ, কারো থেকে ২০ লাখ, কারো কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ধারের নামে। তার নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছ থেকেই নিয়েছে ৮ লাখ টাকা।
 ওই সূত্র জানায়, তসিকুল ইসলাম অমির প্রতরণার শিকার হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিনও। অমির মা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। ধর্মী আচার অনুষ্ঠানে যাওয়ার সূত্র ধরে মাওলানা মতিনকে কথার ‘মায়াজালে’ ফেলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি সাবের রেজা আহম্মেদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন ‘ অমি তার মায়ের মাধ্যমে পৌরসভার সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। এর বাইরে সে অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছে’।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২০ থেকে ২২ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ৩/৪টি কীটনাশক কোম্পানীর টাকাও মেরে দিয়েছে অমি। অমির এই টাকা আত্মসাতের কারণে প্রতিষ্ঠিত কীটনাশক কোম্পানীর তিন কর্মচারীর চাকরীও গেছে।
ওই সূত্র জানায়, টাকা আত্মসাতের বাইরে একটি ব্যাংকে লোনও আছে ৭০ লাখ টাকার।
পুলিশ জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় দায়ের অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে রাজশাহী থেকে কৌশলে গ্রেফতার করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোযেন্দা পুলিশের একটি দল।
চাঁপাইনববগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আড়াই মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা অমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে টাকা ধারের নামে প্রতরণার ফাঁদে ফেলছিল। বিষয়টি আমরা জানতে পারার পর তার (ওই ব্যবসায়ীর) সহযোগিতা নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে আটক করি’।
১৬ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান, গোয়েন্দা পুলিশে এস আই জাহিদ।
পুলিশ জানায়, ওই মামলাটি দায়ের করেন কীটনাশক কোম্পানী সেতু কর্পোরেশন লিমিটেডের বিক্রয় কর্মকর্তা রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হোসেনিগঞ্জের আজিজুল হক।
এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেতু কর্পোরেশন লি. এবং অরনী ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল নিতেন তসিকুল ইসলাম অমির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম বিশ্বাস। আগে নিয়মিত টাকা পরিশোধ করলেও দুই দফায় ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ টাকা আত্মসাত করেন।
এদিকে অমি’র প্রতারণার শিকার কযেকজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে জানিয়েছেন, ধারের নামে টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করে। এরই মাঝে হটাৎ আত্মগোপনে চলে যায় তসিকুল ইসলাম অমি।

সংশোধন ঃ
প্রথমে পোষ্ট হওয়া প্রতিবেদনে পৌরসভার বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলামের কথা বলা হয়েছিল। পুলিশ সূত্র থেকে ‘ পৌর মেয়রের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে’ এমন কথা ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে মেয়র নজরুলের কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে সদর থানার ওসি নিশ্চিত করেছেন সেটি মেয়র নজরুল ইসলাম নন, সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন- সম্পাদক

চাঁপাইনবাবঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৩-০১-১৮