তামিম নয়, ভোলাহাটের সারোয়ার জাহানই নব্য জেএমবি’র প্রধান

ঢাকার আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানের সময় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত আবদুর রহমানই নব্য জেএমবির কথিত প্রধান শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। এটি তার সাংগঠনিক নাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের মুসরিভুজা গ্রামের এ জঙ্গির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
উল্লেখ্য, এর আগে বলা  হচ্ছিল তামিম চৌধুরী গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক। নব্য জেএমবি’র সমন্বয়কারীও ছিল সে।

র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক ‘আবদুর রহমানের নির্দেশে অন্তত ২৪টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ, ঢাকায় তাভেলা সিজার ও রংপুরে হোশি কোনিও হত্যার ঘটনাও রয়েছে’। তিনি বলেন, ‘তামিম চৌধুরী নয়, আবদুর রহমানই গুলশান হামলার মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে। যদিও বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছিল তামিম গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক। নব্য জেএমবির সমন্বয়কারীও ছিল সে’।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মতিঝিল ও মহাখালী থেকে আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। তারা হচ্ছে, মতিঝিলে হুন্ডি ব্যবসায়ী 'এসোসিয়েট এক্সচেঞ্জ'-এর মালিক হাসিবুল হাসান ও রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী নাফিস আহমেদ নয়ন। তাদের কাছ থেকে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহারের জন্য রাখা ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় র‌্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় জঙ্গি নেতা আবদুর রহমান। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই অভিযানের ১৩ দিন পর গতকাল আবদুর রহমানের প্রকৃত পরিচয় জানাল র‌্যাব।
র‌্যাব মহাপরিচালক জানান, সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমানের আশুলিয়ার বাসা থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা, দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, মোবাইল ফোন, উগ্রপন্থি বইসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সেখানে পাওয়া তার পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কর্মস্থলের পরিচয়পত্রে থাকা ঠিকানায় গেলে তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের মুসরিভুজা গ্রামে তার মা-বাবার সন্ধান পাওয়া যায়। তারা ছবি দেখে কথিত আবদুর রহমানকে তাদের ছেলে সারোয়ার জাহান বলে শনাক্ত করেন। তার বাবা আবদুল মান্নান পেশায় দর্জি।
নব্য জেএমবি প্রধান হিসেবে চিহ্নিত সারোয়ার জাহানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এমন খবর পাওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মীরা ভোলাহাটে অনুসন্ধানে গেলে বেরিয়ে আসে নানান তথ্য। দীর্ঘ দিন থেকে এলাকা ছাড়া ছিল সারোয়ার জাহান। কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করা সারোয়ার জাহান ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিল। তার প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তান ও দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আগেই বিচ্ছেদ হয়েছে।
তার পিতা আব্দুল মান্নান পেশায় দর্জির কাজ করে সংসার চালান এবং স্থানীয়ভাবে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সারোয়ার জাহানের ভাই কামরুজ্জামান বলেন, ‘১৭-১৮ বছর ধরে ভাইয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সে মা-বাবার দেওয়া নামও পাল্টে ফেলেছে। সে পরিবারের কুলাঙ্গার’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২১-১০-১৬

,