এবার ১২ বিকাশ এজেন্ট প্রতারকদের খপ্পরে ❀ খোয়া গেছে সাড়ে চার লাখ টাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিকাশের এজেন্ট সিম হ্যাক করে ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। গত ২৫ জুলাই সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের অকট্রয় মোড় এলাকার অথৈ টেলিকম নামে একটি দোকানের বিকাশের এজেন্ট সিম হ্যাক  করে ২৫ হাজার টাকা তুলে নেয় হ্যাকাররা। বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে বিকাশের স্থানীয় পরিবেশক মেসার্স কোয়ালিটি এন্টারপ্রাইজের অফিসে গিয়ে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অথৈ টেলিকমের মালিক নবিউল ইসলাম বকুল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু নবিউল ইসলাম বকুলই নয়, গত ৩০ দিনের ব্যবধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১২ জন বিকাশ এজেন্ট একই ধরনের প্রতারনার স্বিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে প্রতারনার স্বিকার হয়েছেন ৪ জন, ভোলাহাট উপজেলায় ৪ জন, গোমস্তাপুর উপজেলায় ২জন ও নাচোল উপজেলায় ২জন।
প্রতারণার স্বিকার ব্যবসায়ীরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার অকট্রয় মোড় এলাকার অথৈ টেলিকমের মালিক নবিউল ইসলাম বকুল, তার এজেন্টে সিম থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রতারকরা তুলে নিয়েছে,নামোসংকর বাটি উত্তর চামাগ্রামের রজনীগন্ধা হ্যালো পয়েন্টের মালিক শরিফ উদ্দীন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা, শিবতলা এলাকার আকতারুজ্জামান তৌহিদ পোল্টী ফিডের মালিক আকতারুজ্জামান প্রতারনার স্বিকার হয়েছেন ১০ হাজার টাকা, সদর উপজেলার সুন্দরপুরের সোহাগ হোমিং হল ও ফার্মেসীর মালিক ফাইজুদ্দীন, তার ক্ষতি ৫০ হাজার টাকা, এদিকে ভোলাহাট উপজেলার মাইশা টেলিকমের মালিক মোহাম্মদ আলী, তার ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, একই উপজেলার আমিন ফার্মসীর মালিক রুহুল আমিন, তার ক্ষতি ৯০ হাজার টাকা, একই উপজেলার মায়া কসমেটিক এ্যান্ড ভ্যারাইটিস স্টোরের মালিক ইউসুফ আলী,তার ক্ষতি ২৫ হাজার টাকা, একই উপজেলার তুবা ফার্মেসীর মালিক মোসারফ হোসাইন তার ক্ষতি ৫০ হাজার, অন্যদিকে গোমস্তাপুর উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ ২ ব্যবসায়ী হলেন, কুমকুম ইলেকট্রনিকের মালিক ইউসুফ আলী, তার ক্ষতি ২১ হাজার টাকা, সাকিব হাসান কম্পিউটার এ্যান্ড ফটোস্টাট এর মালিক শহিদুল ইসলাম, তার এ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গেছে ৩৭ হাজার ২৮৬ টাকা,নাচোল উপজেলারও ২ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তারা হলেন  বন্ধু বস্ত্রালয়ের মালিক তাসিরুল ইসলাম, প্রতারক চক্রটি তার সিম থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৫৬ হাজার টাকা এবং রাকিব টেলিকমের মালিক রাকিবুল ইসলামের বিকাশের এজেন্ট সিম থেকে খোয়া যায় ৪ হাজার ১৯৯ টাকা। 
অথৈ টেলিকমের মালিক নবিউল ইসলাম বকুল হ্যাকিংয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সোমবার ২৫ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় পরিবেশকের প্রতিনিধি ব্যবহৃত ০১৭৩০২৪০৯৪৩ (সাধারণ টাকা দেনদেনে পরিবেশকের সঙ্গে এজেন্টের ব্যবহৃত নম্বর) এ নম্বর থেকে আমার বিকাশ এজেন্ট নম্বরে (০১৭৮৪৪৪৫২৩৮) ফোন দেওয়া হয়। বকুল বলেন, এই সময় তাকে বলা হয় আপনার নম্বরে হেড অফিস থেকে ফোন দেওয়া হচ্ছে আপনি ধরছেন না কেন। তারা আপনার পারশোনাল নম্বরে ফোন দিচ্ছে আপনি ফোনটি ধরেন। এরপর ০১৭২৯৮৬৫৯২০ নম্বর থেকে তার নিজস্ব ০১৭১৬০২৭৭০১ নম্বরে ফোন করে, ফোনটি রিসিভ করা মাত্র তাকে রাগান্তিত হয়ে বলে আপনি ফোন ধরছিলেন না কেন, এরপর বিকাশের একটি নতুন অপশন চালু হয়েছে যার মাধ্যমে এজেন্ট খেকে এজেন্টে টাকা পাঠানো যাবে বিষয়টি জানিয়ে বিকাশের *২৪৭# নম্বর ডায়েল করতে বলে। অপর প্রান্তের নির্দেশনা অনুযায়ী এরপর তাকে ০ পেস করতে বলা হয়, এরপর *০০*৩৫# নাম্বার প্রেস করতে বলা হয়। এরপর থেকেই তার বিকাশের এজেন্ট সিমটি হ্যাক হয়ে যায় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত অথৈ টেলিকমের মালিক নবিউল ইসলাম বকুল। তার বিকাশ একাউন্টে থাকা ২৫ হাজার টাকা ওই প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নেয়।
তিনি বলেন ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় পরিবেশক মেসার্স কোয়ালিটি এন্টারপ্রাইজের অফিসে গিয়ে জানাই, কিন্তু তারা আমাকে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এমনকি কয়েকদিন পার হলেও আমার টাকা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমার যেহেতু প্রতিদিন আমার এলাকায় বিকাশের যে প্রতিনিধি আছে (এস আরের) তার  কাছে টাকা বুঝে নেয়, সেহেতু তার নম্বর থেকে আমাকে প্রথমে ফোন দেওয়া হয়েছিল, বিধায় আমি বিশ্বাস করে হেড অফিসের ফোন মনে করে ফোন ধরেছি এবং ওই ফোনের নির্দেশনা অনুয়ায়ী কাজ করেছি। এর ফলে আমি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি, অথচ স্থানীয় পরিবেশক এ বিষয়টি নিয়ে কোনো ভ্রƒক্ষেপই করছে না।’
ভোলাহাট উপজেলার মাইসা টেলিকমের মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, আমার দোকানে আমার ছোট ভাই ছিলো সেদিন, জুলাই মাসের ২ তারিখের দিকে বিকাশের হেড অফিসের পরিচয় দিয়ে বিকাশের নতুন অপশন চালু হয়েছে, এটি চালু করতে হবে বলে বিকাশের এজেন্টে নাম্বারে ফোন এসেছিলো, ওই সময় ওদের নির্দেশনা অনুয়ারী কাজ করেছে আমার ছোট ভাই পরে টাকা নায় হয়ে গেছে এ্যাকাউন্ট থেকে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী, একই উপজেলার আমিন ফার্মেসীর মালিক রুহুল আমিন জানান, তার এজেন্ট নাম্বারে বিকাশের অফিস থেকে বলছি জানিয়ে বলা হয়, এখন থেকে বিকাশের নতুন একটা অপশন চালু হয়েছে এতে কমিশন বেশি পাবেন, এজেন্ট থেকে এজেন্ট টাকা পাঠাতে পারবেন, এরপর দুইবার শুন্য টিপতে বলে তারপর ওদের কথা মত মোবাইল টিপতে থাকি পরে বুঝতে পারি আমার সিমের সব টাকা কিভাবে ওরা তুলে লিয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় পরিবেশক মেসার্স কোয়ালিটি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান জানান, আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের এজেন্টেদের এজেন্ট সিম থেকে কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলতে নিষেধ করি, সেই সঙ্গে কেউ কোন বাটন পেস করতে বলে বা অন্য কোন নির্দেশনা দেয় এটি অনুসরন না করার জন্য বলে থাকি। কিন্তু তারপরও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্র গুলো সাধারণত, যে ব্যবসায়ী টার্গেট করে, তারা আগে সেই ব্যবসায়ী এজেন্ট নাম্বার, ওই রুটের এসআরের নাম্বার ও ম্যানেজারের নাম্বার সংগ্রহ করে। সাধারনত এই নাম্বার গুলো, দোকানে দৃশ্যমান থাকে। যখন কোন এজেন্টেকে তারা প্রতারকচক্রটি ফাঁদে ফেলে, তখন তারা একই সময় ওই এজেন্টের রুটের এসআর ও ম্যানেজারের নাম্বারের ফোন দিতে থাকে, ফোনগুলো ব্যাস্ত থাকে, যাতে ওই এজেন্ট চাইলেও এসআর বা ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। ফলে অনেক সময় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে যায় এজেন্টরা।
তিনি বলেন, গত ৩০ দিনের ব্যবধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার ১২ জন বিকাশ এজেন্ট একই ধরনের প্রতারনার স্বিকার হয়েছেন। সবমিলিয়ে এজেন্ট সিম থেকে হ্যাকাররা তুলে নিয়েছেন ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫ টাকা।
মেসার্স কোয়ালিটি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আমাদের হেড অফিসে জানিয়েছি। সেই সঙ্গে এজেন্টেদের সচেতন কারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ বিশেষ প্রতিবেদক/ ৩০-০৭-১৬