তবলা বাদক রবীন্দ্র-নজরুল সংগীতের বিচারক!

কবিগুরু ররীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তি উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি’র রবীন্দ্র সংগীতের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহকারী তবলা প্রশিক্ষক! একই সঙ্গে বিচারক ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐহিত্যবাহী লোক সংস্কৃতি গম্ভীরা’র নাতীও।
সদর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, দু’ কবির জন্ম জয়ন্তি উপলক্ষে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তিনটি গ্রুপে নৃত্য, রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুলগীতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মির্জা শাকিলা দিল হাছিন প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রতিযোগিতায় শিশু থেকে ৪র্থ শ্রেণী, ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণী ও ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এতে তিন গ্রুপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৩৬ জন প্রতিযোগী অংশ গ্রহণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি’র একজন সদস্য বলেন, ‘অংশ নেয়া ৩৬ প্রতিযোগীর সিংহভাগই ‘ঘুরেফিরে’ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়’।
ওই সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতায় বিচারকে দায়িত্ব পালন করেন মোট ৫জন। প্রবীণ সংগীত শিল্পী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমি’র নৃত্য প্রশিক্ষক গৌরিচন্দ সিতু, সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আফম হাসান, মহানন্দা সংগীত নিকেতনের পরিচালক আবুল কাশেম অনু, চাঁপাই গম্ভীরা দলের ফাইজুর রহমান মানি। ওই ৫জনই সম্মিলতভাবে সব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের প্রতিভা’র বিচার করেন।
এদিকে প্রতিযোগিতার বিচারকের তালিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবুল কাশেম অনু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহকারী তবলা প্রশিক্ষক। তিনি তবলা প্রশিক্ষক হিসেবে শিল্পকলা থেকে নিয়মিত সম্মানি লাভ করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে তবলা বাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দায়িত্ব পালন করা ফাইজুর রহমান মানি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা’র নাতি। আর আফম হাসান একজন শিক্ষা কর্মকর্তা।
নিয়মিত তবলা বাদক, লোকশিল্পী এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুলগীতির মত প্রতিযোগিতার বিচার করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া কয়েকজন প্রতিযোগীর অভিভাববক। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘ তিনটি গ্রুপে প্রতিযোগিতা। অথচ ৫ জন মিলেই সবগ্রুপের বিচার করলেন। যার সংগীতে দখল আছে অথচ নৃত্যে অনভিজ্ঞ তিনিও নৃত্যের বিচার করলেন। গ্রুপ ভিত্তিক ৩ জন করে বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্রতিযোগিতার বিচার না করে দায়সারভাবে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করা হয়েছে’।
বিচারকের দায়িত্ব পালন করা ফাইজুর রহমান মানি বলেন, ‘উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে বিচারক হিসেবে ডাকা হলে আমি গিয়ে বিচারকের দায়িত্ব পালন করি’।
এব্যাপারে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মির্জা শাকিলা দিল হাছিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির অনুকূলে একটা বরাদ্দ আসার প্রেক্ষিতে একাডেমির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বাজেট একেবারেই কম। অধিক সংখ্যক বিচারক নিলে যথাযথ সম্মানিও দেয়াও সম্ভব হতো না। তাই স্বল্প পরিসরেই এইভাবে আয়োজন করতে হয়েছে’। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১০-০৫-১৬