পৌর নির্বাচনে জামায়াত > প্রচারনায় আড়াল থেকে বেড়িয়েই ‘উত্থান’

জামায়াত বিএনপি’র ঘাটি হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিচিতি অনেক আগে থেকেই। এবারের পৌর নির্বাচনে ‘ভোটের অংকে’ পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ অনেক ভাল করলেও পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বহু মামলার আসামী জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। গত পৌর নির্বাচনে ‘ভাটিতে’ থাকা জামায়াত আবার ‘উজানে’ এসেছে। চলতি পৌর নির্বাচনে বহু মামলায় ‘জর্জরিত’ জামায়াতের নেতাকর্মীরা গোপনে গোপনে প্রচার প্রচারণা চালানোর মাঝেই হটাৎকরে প্রকাশ্যে প্রচারণার সুবাদে পরিবর্তন আসে নির্বাচনী হাওয়ায়। হাওয়া লাগে জামায়াতের পালে। ১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় জামায়াতের ‘শক্ত’ অবস্থান বিগত দু’ দশকেরও বেশী সময় ধরে। ১৯৮৯ সালে জামায়াত নেতা অধ্যাপক লতিফুর রহমান পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর আরো দু’বার চেয়ারম্যান ও মেয়র পদটি দখলে নেয় জামায়াত নেতা অধ্যাপক আতাউর রহমান। গত পৌরসভা নির্বাচনে অধ্যাপক আতাউর রহমানই জামায়াত সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনার শেষ মুর্হুতে হটাৎকরে জামায়াত তাদের প্রার্থী বদল করে। মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিয়ে আসে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফুর রহমানকে। ওই নির্বাচনে জামায়াত তাদের ভোটের অংক ‘স্থিতি অবস্থায়’ রাখলেও উত্থান হয় বিএনপি’র। বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল মতিন। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র মাওলানা আব্দুল মতিন ৩২ হাজার ১৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। জামায়াতের লতিফুর রহমান পান ২৭ হাজার ৯১৩ এবং আওয়ামী লীগের মইনুদ্দীন মন্ডল ২২ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকেন।
সূত্র জানিয়েছে, গত পৌর নির্বাচনের পর যুদ্ধাপরাধ ইস্যু এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ও এসব ঘটনায় দায়ের মামলায় অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জামায়াত। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে আত্মগোপনে চলে যান নেতারা। গোপনে গোপনেই চালান তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এরই মাঝে নির্বাচনী ‘হাওয়া’ শুরু হলে অনেক আগেই সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াত তাদের মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে। একই সঙ্গে গোপনে গোপনে চলে প্রচারণাও।
এদিকে, আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ‘নির্বাচনী জোটের’ দেখা মিলেনা। জাতীয় নির্বাচনেও তারা পৃথক পৃথকভাবেই নির্বাচনে অংশ নেয়। দলীয় সূত্র জানায়, চলতি পৌর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত থেকে অব্যাহতি পাওয়া জামায়াতের সাবেক নেতা অধ্যাপক আতাউর রহমানকে দলে ভিড়িয়ে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করলে নড়েচড়ে বসে জামায়াত। তারা তাদের ঘোষিত মেয়র প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামকে জয়ী করতে নানা কৌশল অবলম্বন শুরু করে। ওই সূত্র জানায়, বিভিন্ন আদালতে দায়ের থাকা ১৭টি মামলার আসামী নজরুল ইসলাম মামলা জটিলতায় প্রকাশ্যে ‘কাজ’ করতে না পারলেও তাদের বিশাল কর্মী বাহিনী গোপনে গোপনে চালিয়ে যান নির্বাচনী তৎপরতা। এরই মাঝে হটাৎকরেই প্রকাশ্যে চলে আসেন প্রচার প্রচারণায়। এরফলে পরিবর্তন আসে পৌর নির্বাচনী হাওয়ায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনায় চলে আসেন গত নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াত। যদিও গত উপজেলা নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘সাঈদী’ ইমেজে জামায়াত ব্যাপক ভোট পেয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, সাবেক জামায়াত নেতা আতাউর রহমান বিএনপি প্রার্থীর হওয়ায় জামায়াত বিষয়টিকে ‘সম্মান ইস্যু’ হিসেবে নেয়। সেই হিসেবে জামায়াতের বিশাল কর্মী বাহিনীর পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করে। মূল শহরের বাইরের ওয়ার্ডগুলোতে ‘বিশেষ নজর’ দেয়া ও নারী ভোটেই উত্থান ঘটে জামায়াতের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরতলীর চরমোহনপুর, টিকরামপুর, নামোশংকবাটি, রেহায়চর, হরিপুরসহ কয়েকটি এলাকায় জামায়াত প্রার্থী ভাল ফল লাভ করে। ওই সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মোটর ভোটারের মধ্যে নারীর ভোটারের সংখ্যা ৬৩ হাজার। ভোটাধিকার প্রয়োগে যাদের উপস্থিতি থাকে বেশী। সেই নারী ভোটারদের দখলে রাখতে নানা কৌশলে কাজ করে জামায়াত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামায়াত নেতা বলেন, ‘সরকারের দমন পিড়নে ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা মনবল শক্ত করেই কাজ করে। সেই নারী ভোটারদের কাছে থাকা আমাদের আগের ইমেজ এবারও কাজে লেগেছে’।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবার জামায়াত তাদের  কাউন্সিলর প্রাথীদের পাশাপাশি অধিক গুরুত্ব দেয় মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে এবং তাতে সফলতাও আসে। দলের নেতা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জয়ী হন ৩১ হাজার ৫০৪ ভোট পেয়ে। তবে ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দেয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে। গত নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডে জামায়াতের ১০ জন নির্বাচিত হলেও এবার নির্বাচিত হতে পারেননি একজনও।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০২-০১-১৬

,