চাঁপাইনববগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন > অধিক কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

উত্তর জনপদের শতবর্ষী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীভাবে মেয়র প্রার্থী চুড়ান্ত করা হলেও পৌরসভার ১৫টি ওর্য়াড ও ৫ টি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলীয় সমর্থন চুড়ান্ত করতে পারেনি। পৌর নির্বাচনে ‘ভোটের অংকে’ এগিয়ে থাকা জামায়াত-বিএনপি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আগে থেকেই একক প্রার্থী চুড়ান্ত করলেও ‘পিছিয়ে থাকা’ আওয়ামী লীগে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামীলীগ সমর্থতি একমাত্র প্রার্থী থাকলেও অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোর প্রতিটিতেই একাধিক প্রার্থী রযেছে। ৬ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন করে ও অন্যান্য ওর্য়াডে ২/৩ জন করে আওয়ামীলীগ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সির পদে মোট ৭৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী।
স্বাধীনতা পরবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মাত্র দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বাকী তিন দশকেরও বেশী সময় চেয়ারম্যান ও মেয়র পদটি দখলে নেয় জামায়াত, বিএনপি ও জাসদ নেতারা। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে ১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে একটি মাত্র ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচতি হয়েছিলেন। ১০টিতে হয়েছিলেন জামায়াত নেতা এবং ৪টিতে বিএনপি। সেই হিসেবে ‘ভোটের অংকে’ এগিয়ে থাকা জামায়াত ও বিএনপি চলতি নির্বাচনী হাওয়া শুরুর আগেই প্রতিটি ওর্য়াডেই কাউন্সিলর প্রার্থী চুড়ান্ত করে নির্বাচনী কার্যক্রম চালালেও ‘পিছিয়ে’ থাকা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থন ঠিক করতে পারেনি। তবে, বিএনপিতেও দু’/ একটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। আর জামায়াত ‘ষোল আনায়’ প্রার্থী চুড়ান্ত করে কাজ করছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছেন, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী সর্মথন নিশ্চিত করতে পেরেছে। বাকী ১২টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই রয়েছে ২/৩ জন করে। এমনকি দু’টি ওয়ার্ডে রয়েছে ৪ জনকরে প্রার্থী। ওই সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রীয়ভাবে জড়িত এবং প্রার্থীর হতে দলীয় সমর্থন চেয়ে আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন করেছিলেন তারাই চুড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল খালেক মিলন, ইফতিখার আহম্মদ রঞ্জু, ২ নম্বর ওয়ার্ডে জিয়াউর রহমান আরমান, শহীদ হোসনে রানা, শাহ জালাল শাহীন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তামিজ উদ্দীন, ইউসুফ আলী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আজিজুল্লাহ হায়দার, মতিউর রহমান মটন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাদেকুল ইসলাম কুতুব মিয়া, স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে আকবর আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম, লতিফুল ইসলাম মামুন আবুল বাসার খান, মোহাম্মদ আলী, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নুরুল ইসলাম মিনহাজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফজলুর রহমান, শাহ আলম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আফজাল হোসেন পিন্টু, আবুল কালাম আজাদ, ১০ নম্বর আব্দুল খালেক, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল হান্নান, সৈয়দ লিয়াকত আলী লিটন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ইব্রাহিম আলী, রেজাউল করিম রেজু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নূর আলম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ আলম, গোলাম কাবির, ১৫ নম্বর ওর্য়াডে শাখাওয়াত হোসেন শওকত, আমিরুল মোমেনীন বাবু, মোহাম্মদ আলমগীর, ইকবাল হোসেন ছোটকু। এদিকে, পৌরসভার ৫টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী সংখ্যা কম থাকায় ‘এমনি এমননিতে’ ৪টি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী হয়ে গেছে। তবে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে  (১৩,১৪,১৫ নম্বর ওয়ার্ড) জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর সাকিনা খাতুন প্রার্থীতায় রয়েছেন। সেখানে আরো একজন প্রার্থী হয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য তাসনিমা আনোয়ার কলি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের নেতাদের সমন্বয়হীনতার কারণেই কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্য থেকে একক প্রার্থী বেছে সমর্থন নিশ্চিত করা যায়নি। ওই সূত্র জানায়, নির্বাচনী ‘হাওয়া’ শুরুর পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ও সমর্থন নির্ধারণ করতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হটাৎকরে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে মেয়র প্রার্থীদের ২০ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ১০ হাজার টাকা মূল্যের আবেদন ফরম কিনে আবেদন করার লিখিত নির্দেশ প্রদান করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী তার নির্ধারিত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মেয়র প্রার্থী হিসেবে এক যুবলীগ নেতাসহ ৩ জন এবং প্রায় ২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আবেদন করেন। এরই মাঝে জেলা আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাল্টা ‘পত্র’ জারি করে সভাপতির নির্দেশ স্থগিত করে দেন। ঝুলে যায়, প্রার্থী নির্ধারণী কার্যক্রম। দলীয় ওই সূত্র জানায়, তফসলি ঘোষণার পর ‘নড়েচড়ে’ বসে আওয়ামী লীগ। হটাৎকরে ২৭ নভেম্বর দলীয় সভা আহবান করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী আবেদনকারীদের একদম আলোচনায় না নিয়ে এসে নতুন করে মেয়র পদে মাত্র তিন ‘আবেদনকারী’ নির্ধারণ করে তার মধ্য থেকে মাত্র একজনের নাম কেন্দ্র’র কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর মাত্র একদিন সময় দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ‘বিনাপয়সায়’ নতুন করে আবেদন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সে নির্দেশনা অনুযায়ী রেকর্ড পরিমাণ কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় অফিসে আবেদন করেন। দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলর পদে আবেদনকারীদের আবেদনগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ কোন আনুষ্ঠাানিক বৈঠকই করেনি। ‘অন্ধকারেই’ পড়ে থাককে আবেদনগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘খেয়াল খুশি মত সংগঠন চালানো হচ্ছে। সভাপতি আবেদন করতে বলে সেই আবেদন ফিরে দেয়া হলো। পরে আবেদন নিয়ে পরেরদিনই প্রার্থী সমর্থন চুড়ান্ত করার কথা। কিন্ত নেতারা কোন মিটিং করলো কি করলোনা জানতে পারলামনা’। তিনি বলেন,‘ আওয়ামী লীগের নেতারা যেহেতু মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাদের পচ্ছন্দের প্রার্থীকে চুড়ান্ত করতে ‘ অধিক ‘ব্যস্ত’ ছিলেন সেহেতু কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থনে ‘মনোযোগই’ ছিলনা’।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ একাজটিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যা আমাদের জন্য শুভ নয়। জেলা আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ এবং নেতাদের সমন্বয়হীনতার কারনেই এমনটা হয়েছে’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৮-১২-১৫

,