ঘর-ধর্ম দুটোই ছাড়লেন নাচোলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিমা রানী > নতুন নাম জান্নাতুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা পরিষদে আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিমা রানী ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেছেন তারই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রোকাব উদ্দীন দেওয়ানকে। গত নভেম্বর মাসে ধর্মান্তরিত এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনা ঘটলেও এতোদিন কৌশলে তা গোপন রাখা হয়েছিল। ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবার পর গত ৭ দিন থেকে তিনি তার সাবেক হিন্দুধর্মালম্বি স্বামীর বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। এখন তিনি সাবেক স্বামীর ঘর ছেড়ে থাকেন ভিন্ন যায়গায়। খোদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিমা রানী হালে জান্নাতুন মুন্নি বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের কলিহার গ্রামের মতিলাল মন্ডলের সঙ্গে প্রায় দু’ দশক আগে বিয়ে হয় গোদাগাড়ির ঝালপুকুরিয়া এলাকার প্রল্লাদ চন্দ্র ও মালতি রানী মেয়ে প্রতিমা রানীর। পরে প্রল্লাদ চন্দ্র ও মালতি রানীর পরিবার গোদাগাড়ি ছেড়ে বসতি স্থাপন করে নাচোলে। একসময়ের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী মতিলাল মন্ডলের স্ত্রী প্রতিমা রানী স্বামীর সূত্রধরেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সেই সূত্র ধরে আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসুচিতে তার সরব উপস্থিতি শুরু হয়। আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আরো সক্রিয়া হয়ে উঠা প্রতিমা রানী খুব স্বল্প সময়ে আওয়ামীলীগের ‘বাঘাবাঘা’ নেতাসহ বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীদের সানিধ্যে চলে আসেন। ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ওই নির্বাচনে ৩২ হাজার ৯শ ১৪ ভোট পাওয়া রেহেনা খাতুনের কাছে তিনি পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে প্রতিমা রানী ১৯ হাজার ২শ ২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। নির্বাচনী যুদ্ধে পরাজিত হলেও দলীয় কর্মসুচিগুলোতে আগের মতই সরব উপস্থিতি বজায় রেখে চলতে থাকনে। ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের সরকারি ও দলীয় কর্মসুচিতে প্রতিমা রানীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় নেমে আওয়ামীলীগের প্যানেল বিজয়ে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সূত্র জানিয়েছে, নাচোল উপজেলার বিশাল আদিবাসী জনগোষ্টি ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘সহানুভুতি’র সুবাদে তিনি ব্যাপক ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের আসনে বসেন। ২০১০ সালে জিপিএ ৩.৭০ পেয়ে এসএসসি পাস করা প্রতিমা রানী ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালেই ‘সর্ম্পক’ সৃষ্টি হয় একই উপজেলার নির্বাচন অফিসের দায়িত্বে থাকা এবং পার্শ্ববর্তী তানোর উপজেলার কোইল গ্রামের অধিবাসী রোকাব উদ্দীন দেওয়ানের সঙ্গে। সূত্র জানিয়েছে, রোকাব উদ্দীন দেওয়ানের সঙ্গে প্রতিমা রানীর সর্ম্পকের বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয় এক মোহরারের মাধ্যমে। তিন সন্তানের জনক রোকাব উদ্দীন দেওয়ানের (পুর্বের) স্ত্রী একটি জমি রেজিষ্ট্রির খোজ নিতে গিয়ে দেখেন ওই জমি রেজিষ্ট্রি হয়েছে প্রতিমা রানীর (সাবেক নাম) নামে। রেজিষ্ট্রি দলিলের ছবি দেখে আমিরুল মোহরার নিশ্চিত করেন জমিটি রেজিষ্ট্রি হয়েছে মহিলা ভাইস চেয়ারম্য্যানের নামে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে এফিডেভিটের মাধ্যমে প্রতিমা রানী নাম পরিবর্তন, ধর্মান্তরণ ও বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন রোকাব উদ্দীন দেওয়ানের সঙ্গে। দুই ছেলে সন্তানের জননী তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জান্নাতুন মুন্নি। এ ব্যাপারে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ ঘটনা সত্য। অনেক যায়গায় অনেক ঘটনা ঘটছে। আমিও ঘটিয়েছি। এ নিয়ে নিউজ করার কি আছে’। তিনি নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘ আমি বিয়ে করেছি। কখন করেছি, কোন সময় করেছি এতোটো আপনাকে বলবো না’।
এদিকে প্রায় আট মাস আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা ও নাম পরিবর্তন করা হলেও তিনি কৌশলে বিষয়টি গোপন রেখে সাবেক স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। এমনকি গতমাসেও ( মে মাসে) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে শাঁখা হাতে দেখা গেছে। নাম পরিবর্তন করলেও এখনও তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করছেন প্রতিমা রানী হিসেবেই।
তিনি বলেন, ‘৭/৮ দিন থেকে আমাকে বাড়ি থেকে ত্যাগ করে দিয়েছে। আমি চলে এসেছি। ধর্ম ত্যাগ করলে কি তারা আমাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দিবে’।
এতো দিন ছিলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনা গোপন করে ছিলাম। একই বাসাই ছিলাম কিন্তু তার সঙ্গে ( মতিলালের সঙ্গে) আমার স্বামী স্ত্রী ও কোন সর্ম্পক ছিলনা। সেতো বাড়ি থাকতো না চাকরী করে বাইরে থাকে’।
এদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের এই বিয়ের ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, ‘ নাচোলের বিশাল ভোট ব্যাংক আদিবাসী সম্প্রদায়। নির্বাচনে তাদের কাছে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছিল। সে যায়গাটা তাকে নিয়ে হুমকী হয়ে দাড়ালো।
তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিমা রানী মন্তব্য করেন, ‘আমি ধর্ম ত্যাগ করলেও তো আমার শরীরে হিন্দু’র রক্ত প্রাবাহিত হচ্ছে’।





চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৮-০৬-১৫

, ,