শিবগঞ্জে চক নদীর তলা জুড়ে ফসলের সমারোহ, বিলীন হয়ে গেছে নদীর অস্তিত্ব


  এক সময়ের  গভীর  নদী এখন যার তলা জুড়ে ফসলের সমারোহ। শুধুু ফসলই নয় সারি সারি আম বাগান ও  বাড়িঘর। ভারতের মালদহ থেকে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নাধীন চৌকা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকারী  এ নদীর নাম চকের নদী। এ নদীর পানি খুব পরিস্কার ও চকচকে ছিল এ নদীরনাম চক নদী বলে মুরব্বীদের অভিমত।  নদীটি জন্মকাল সমদ্ধে কেউ কোন সঠিক ধারণা দিতে না পারলেও এটা ঠিক যে বৃটিশ  শাসনের পূর্ব থেকে  মূল পদ্মা নদী থেকে  জন্ম হয় এ নদী । প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ এ নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত থেকে শুরু করে দূর্লভপুর  ইউনিয়নাধীন ১৫রশিয়া গ্রামের মাথায়  পাগলা নদীর সাথে মিশে গেছে।স্বাধীনতা উত্তরকালেও নদীটির প্রস্ত ছিল প্রায় আধাকিলোমিটার এবং গভীরতা ছিল প্রায় ২৫/৩০ফিট । এক সময় এ নদী দিয়ে  দেশ বিদেশ থেকে বাণিকরা  ৫শ মণী থেকে হাজার মণী পণ্য বাহী  নৌকা নিয়ে  বানিজ্য করতে আসতো। ফলে এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল শতাধিক  বছরের পুরানো মনাকষা বাজার, ৫০ বছরের পুরানো দাদনচক বাজার সহ আরো কয়েকটি ছোট ছোট বাজার। পাকিস্থান আমলে গড়ে উঠেছিল চৌকা ও মনাকষা ইপিয়ার ক্যাম্প যা বর্তমানে বিজিবি ক্যাম্প নামে পরিচিত। আরো গড়ে উঠেছিল হুমায়ন রেজা উচ্চবিদ্যালয় আদিনা কলেজ, হেমায়েত উচ্চ বিদ্যালয় সহ অনেকগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ নদী তীরে এ সময় বৃটিশরা একাধিক নীলের কারখানা তৈরী করে এলাকার কৃষকদের জোর করে নীল চাষ করে নিত।  কৃষকদের প্রতি নীলকরদের অত্যাচারে কথা শুনলে আজও চোখে আসে।এখন সে নদী তার নব্যতা একেবারে হারিয়ে ফেলেছে। এলাকার জ্ঞানী-গুণীরা জানান এ নদীর তলা জুড়ে  সহস্রাধিক একর যে খাস ছিল সে গুলি স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে রেকর্ডকালে ১৯৭১ সালের পরাজিত পাকিস্থানের দোসর শান্তি-কমিটির সদস্যরা কৌশলে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে  মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমিগুলো অন্যের কাছে হস্তান্তর করে। ফলে নদী অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সংগে সংগে আস্তে সে জমিগুলি তারা দখল করে নেয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি গোরস্থান বা হিন্দুদের শশ্মান । এমনকি ৭১সালের  গণকবরও। এখন  এ নদীর তলা জুড়েশতশত একর জমিতে আবাদ হচ্ছে ধান । গড়ে উঠেছে  অনেকগুলো ছোট ছোট গ্রাম ও বড়বড় আম বাগান । ফলে শান্তিকমিটি ভূমি দস্যুদের  কাছেসরকার হারিয়েছে  শতশতকোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি, নদীটি হারিয়েছে তার অস্তিত্ব, জেলারা হারিয়েছে মাছ ধরার আনন্দ। নদীটির তীরবর্তী গ্রামগুলো প্রতিবছরই  অল্প বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। তাই এলাকার অনেকের দাবী ভূমি দস্যুদের হাত থেকে খাস জমিগুলি উদ্ধার করে নদী খননের মধ্য দিয়ে নদীটির  নব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক।



চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ১৫-০৫-১৫

,