বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি মানে ধ্বংস ও মানুষ খুন -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি মানে ধ্বংস ও মানুষ খুন। যারা বাস-ট্রাকে আগুন দিয়েছে মানুষ হত্যা করেছে তাদের কোন ক্ষমা নেই। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই হবে। তিনি বিএনপি জামায়াতকে পরিহার করার আহবান জানিয়ে বলেন, যারা সরকার উৎখাতের নামে মানুষ খুন করে আর তাদের দল নয়, ভোট নয়, সমর্থন নয়। এই প্রতিজ্ঞা সকলে করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতকে মানবতার শত্রু আখ্যায়িত করে তাদের প্রত্যাখান করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ভারতের কাছ থেকে অধিকার আদায় করে আর বিএনপি চাটুকারী করে। তিনবার ক্ষমতায় গিয়ে  বিএনপি একফোটা পানি আনতে পারেনি। আমরা সমুদ্রসীমা জয়, গঙ্গা চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছি। শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে উন্নতি করে আর জামায়াত-বিএনপি করে ধ্বংসের রাজনীতি। ২০০৬ সালে কানসাটে বিদ্যুতের দাবীতে মানুষ যখন আন্দোলন করেছিল তখন খালেদা জিয়া বিদুৎ না দিয়ে ১৭ জনকে গুলি করে হত্যা করে। আওয়ামীলীগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করেছিল। আর বিএনপি জামায়াত কানসাটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়েছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে এই এলাকায় বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে, আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়, শিবগঞ্জের মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রীকে কুপিয়ে জখম করে। বিএনপি ও জামায়াত মানে ধ্বংস আর আওয়ামীলীগ মানে উন্নয়ন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৫ সালে পেট্রল বোমা মেরে মানুষকে হত্যা করে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে হত্যা করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনে, চীফ জুডিমিয়াল ম্যজিষ্ট্রেটের বাসভবনে, আইনজীবি সমিতি ভবনের সামনে বোমা হামলা করেছে। এটাই খালেদা জিয়ার রাজনীতি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামীলীগকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তারা আন্দোলনের নামে প্রায় দেড়শ মানুষ হত্যা করেছে।
জনসভায় জেলার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো। সোনামসজিদ থেকে ভারতের মালদহ পর্যন্ত বাস যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে। রহনপুর দিয়ে নেপালের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্ট্রেশন প্রতিষ্টা করা হবে। নতুন বাস টার্মিনাল করে দেয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।  শেখ হাসিনা একই সঙ্গে ছিট মহলবাসীর উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ছিটমহলবাসী দীর্ঘ দিন কষ্ট করেছে। আর তাদের কষ্ট করতে হবে না। বিদ্যুৎ, রাস্তা, শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থা সবখানে করে দেয়া হবে।
শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি  সদর উপজেলার সাহেবের ঘাটে নির্মিত ৫৪৭ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় মহানন্দা সেতুর উদ্বোধন করেন। বিকেল পৌনে ৪টায় জনসভাস্থলে পৌছে তিনি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বিনার উপকেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের একাডেমিক ভবন ও গোমস্তাপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উদ্বোধন করেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালকে এক’শ শয্যা থেকে আড়াই’শ শষ্যায় উন্নীতকরণ, কানসাট-রহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পদ্মানদীর ভাঙ্গন থেকে আলাতুলী রক্ষা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফর। তার আগমনের প্রতিটি মুহুর্তকে স্বরণীয় করে রাখতে এবং প্রাণঢালা শুভেচ্ছা সংবর্ধনা জানাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরো শহর নতুনভাবে সাজে। শুভেচ্ছা ফেস্টুনে ছেয়ে যায় সড়কগুলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রবেশ মুখ দ্বারিয়াপুর থেকে সোনামসজিদ বন্দর ও শহর থেকে সাহেবের ঘাট পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য দূরদুরান্ত থেকে উৎসূক মানুষের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মত। জন¯্রােত জনসভাস্থল কলেজ মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে আশাপাশের এলাকাতে পৌছে যায়। 
সরকারের বিভিন্ন সফলতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হয়েছে। সবার হাতে হাতে মোবাইল দিয়েছি। প্রায় এক কোটি মানুষকে বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেলের ব্যবস্থা করা হবে। ২০২১ সাল আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, আমার জীবনের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার বাবা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। জনগনের উন্নয়নই আমার লক্ষ্য।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মঈনুদ্দীন মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এমপি, রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ওমর ফারুক এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক, সদর থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল মাহমুদ খান খান্না, শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মিজানুর রহমান,চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফায়জার রহমান কনক প্রমুক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৬-০৫-১৫