ফ্রুট ব্যাগিং প্রযু্িক্ত > আম গাছে কমেছে কীটনাশকের ব্যবহার

নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদন করার এবার প্রথমবারের মত আম বাগানের গাছে গাছে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশাপাশি এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে দেশের আরো ৮টি জেলায়। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবার ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে গবেষণা করা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শরফ উদ্দিন জানান, গত বছর চীনের একটি কোম্পানী আমাদের গবেষনার জন্য কিছু ব্যাগ প্রদান করে। সে ব্যাগ দিয়ে আমরা আমাদের গবেষনা কেন্দ্রে  ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো সাফল্য পেয়েছি। তার মতে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ¯েপ্র করার চেয়ে এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক কম এবং বিষমুক্ত আম উৎপাদন সম্ভব।  এর ফলে আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীরা বেশী লাভবান হবে।
ডঃ শরফ উদ্দিন বলেন বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তুলতে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩/৫টাকা মূল্যেও প্রায় ৫০ হাজার ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি এ সাত  জেলায় আরো ৫০হাজার ফ্রুট  ব্যাগ ব্যবহার করেছে আম ব্যবসায়ী ও আম চাষীরা।
বেলেপুকুর এলাকার  এ বছর ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারকারী জিএম রহমান পলাশ প্রায় ৪ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করেছি এর্ব আরো ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাগ ব্যবহারের ফলে আর কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে না।তাছাড়া আমের দামও বেশী পাবো বলে আশা করছি। তিনি এ ব্যাপারে সরকারী ভাবে উদ্যোগের আশাপোষন করেন।
রাজশাহীর কোর্ট এলাকার হড়গ্রাম গ্রামের নতুন পাড়ার  মাওলানা বেরার উদ্দিন জানান আমি প্রথম দিকে আমার আম বাগানে ¯েপ্র করলেও ফ্রৃট ব্যাগের খবর পেয়ে ২হাজার ফ্রুট ব্যাগ ক্রয়  করে ৩০টি গাছের আমে লাগিয়েছি । তিনি বলেন আম ছিদ্রকারী পোকার মাছির  আক্রমন থেকে আমকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পেলে আগামীতে আরো বেশী সংখ্যাক ব্যাগ ব্যবহার করবো।
ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা নওগা জেলার জাহিদুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের  পলাশের মাধ্যমে এ প্রযুক্তির খবর পেয়ে  নাটোরের নলডাঙ্গা থানার পশ্চিম মাধনগর কাঁজী পাড়া এলাকায় তার নিজস্ব ৩ বিঘা আম বাগানে ৩ হাজার ৮শ টি ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করেছি। খরচের ক্ষেত্রে তিনি বলেনকীটনাশক ব্যবহারের চেয়ে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে খরচ কম। তবে কীটনাশকে খরচ একবারেই করতে না হলেও ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে খরচ একবারেই করতে হচ্ছে
ডঃ শরফ উদ্দিন জানান গত বছর  আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা পর্যাপ্ত পরিমান ফ্রুট ব্যাগ সংগ্রহ করতে না পারলেও এবছর পর্যাপ্তপ রিমান সরবরাহ থাকায় ব্যাগ ক্রয় করতে কোন অসুবিধা হবে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কমপক্ষে ৮-১০ টন রঙিন, ভাল মানসম্পন্ন নিরাপদ শতভাগ রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত আম আম উৎপাদিত হবে। এছাড়াও ব্যাগিং করা আম সংগ্রহের পর ১০-১৪ দিন পর্যন্ত ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এদেশের মানুষ কার্বাইড, ফরমালিন আতংঙ্কে যখন দেশীয় মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে সময়েই এই প্রযুক্তিটি কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে। যে কোন আম চাষী, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ইচ্ছে করলেই এই প্রযুক্তিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে সুফল পেতে পারেন। প্রযুক্তিটি চাষীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হলে কার্বাইড, ইফিফোনসহ অন্যান্য হরমোন এবং ফরমালিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার সম্পর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৯-০৫-১৫