বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর ও আফসারের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়

মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় বুধবার ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এর আগে গত ২২ এপ্রিল এই মামলার কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় অপেক্ষমাণ রাখেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সাহিদুর রহমান ও তুরিন আফরোজ। আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুস সোবহান তরফদার।
মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে। তবে আসামিপক্ষ আদালতে তাঁদের অভিযোগ থেকে খালাসের আরজি জানায়।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাহিদুর রহমান (৮৪) ও আফসার হোসেন ওরফে ছুটু (৭৫) মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলীম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একাত্তরে তিনি স্থানীয় রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়ে স্থানীয পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেন।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসারকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন শিবগঞ্জ শহীদ মিনারে বোমা হামলা মামলার আসামি হিসেবে স্থানীয় আদালতে হাজির করা হলে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর এ দুজনকে মানবতাবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ও ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৩ নভেম্বর তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ১৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ২৪ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নিয়ে তাঁদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন ১০ জন। আসামিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।
তিন অভিযোগ: মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের ৬ অক্টোবর ভোরে প্রায় শতাধিক রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে মাহিদুর ও আফসার চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁদশিকারি, ছামাতল, কবিরাজতলা ও ইরাদত বিশ্বাসেরতলা গ্রাম থেকে ৩৯ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ১৩ অক্টোবর মাহিদুর ও আফসারের নেতৃত্বে রাজাকাররা কবিরাজতলা ও ইরাদত বিশ্বাসেরতলা গ্রামের অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ তাণ্ডবে ৭০টি বড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর মাহিদুর-আফসারসহ ৩০-৩৫ জন রাজাকারের একটি দল শিবগঞ্জের শেরপুর ভান্ডার গ্রামের চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। সারা রাত নির্যাতনের পরদিন তাঁদের হত্যা করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ ডেস্ক রির্পোট/ ১৯-০৫-১৫