কমিটি নিয়ে মুখোমুখি ছাত্রলীগের প্রভাব আওয়ামীলীগে > মামা-ভাগ্নের মধুুর সর্ম্পকে শীতল অবনতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপ সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে কাজ করলেও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। একপক্ষ আনন্দ মিছিল, অন্যপক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরে পৃথক পৃথক শো-ডাউন করেছে। এ ঘটনাকে ঘিরে ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে ২৪ জুন ফায়জার রহমান কনককে সভাপতি ও জিয়াউর রহমান আরমানকে সাধারণ সম্পাদক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের গত কমিটি গঠন হয়েছিল। যা পৃর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর। কমিটি গঠনের চার বছরের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের জেলা ছাত্রলীগ গত ৩০ এপ্রিল জেলা সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করে। কিন্তু গত ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরের কারণে ওই সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। সূত্র জানায়, সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের প্রায় ডজনখানেক নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য নানামুখি তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এরই মাঝে হটাৎকরে গত ১৯ মে সাকিউল ইসলাম সাকিলকে সভাপতি, আরিফুর রেজা ইমনকে সাধারণ সম্পাদক ও মারুফ আহম্মেদ শাওনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কেন্দ্র কমিটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে। এই কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে আবারও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। যার প্রভাব পড়ে আওয়ামীলীগের উপরেও। 
দলীয় সূত্র জানায়, গঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক তিনজনই বিদায়ী কমিটির সভাপতির আর্শিবাদপুষ্ট। আর নতুন কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডলের ভাতিজা। ওই সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে ভাতিজা সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডল সন্তুষ্ট। তবে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি মতামত না নিয়ে কমিটি দিয়ে দেয়ায় এবং পছন্দের প্রার্থী নেতা হতে না পারায় অসন্তোষ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এমপি। 
দলীয় সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে মইনুদ্দীন মন্ডল ও আব্দুল ওদুদ ( যারা সর্ম্পকে মামা ভাগ্নে, বিএনপি’র সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের আপন মামা মইনুদ্দীন মন্ডল ্আর আপন চাচাতো ভাই আব্দুল ওদুদ) দীর্ঘদিন বিপরীত অবস্থানে থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন নিয়ে তারা এককাতারে মিলেমিশে যায়। মামা মইনুদ্দীন মন্ডল হয় সভাপতি আর ভাগ্নে আব্দুল ওদুদ হয় সাধারণ সম্পাদক। সর্ম্পকের এই মধুর সময়ে তাদের মধ্যে আবারও দেখা দিয়েছে শীতল অবনতি। 
এদিকে, নতুন কমিটি গঠনকে ঘিরে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ আওয়ামীলীগ নেতাদের আর্শিবাদ নিয়ে মুখেমুখি অবস্থান নিয়েছে। কমিটি গঠনের পর নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বুধাবার সন্ধ্যা ৬টায় আনন্দ র‌্যালির নামে শহরে বিশাল শো-ডাউন করে। শহরের শহীদ সাটু হল মোড় থেকে বের হওয়া ওই র‌্যালিতে অংশ নেয় বিদায়ী কমিটির সভাপতি ফায়জার রহমান কনকও। স্থানীয়রা জানিয়েছে, সন্ধ্যার ওই র‌্যালির পর সরকারি কলেজ সংলগ্ন এলাকাসহ শহরে বিচ্ছিন্নভাবে চারটি ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে ছাত্রলীগের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। 
অন্যদিকে, নতুন নেতাদের শো-ডাউনের পর বৃহস্পতিবার সকালে কমিটি বাতিলের দাবিতে পাল্টা শো-ডাউন করে ছাত্রলীগের অপর অংশ। সকালে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় থেকে জেলা ছাত্রলীগ ও সচেতন সাধারণ ছাত্র’র ব্যানারে বের হওয়া মিছিলে ছাত্রলীগের নতুন নেতাদের বিপক্ষে এবং সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের পক্ষে শ্লোগান দেয়া হয়। মিছিলের ব্যানারে নতুন কমিটির সভাপতিকে চাঁদাবাজ, অছাত্র, ছিনতাইকারী ও ফেন্সিডিলখোর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মিছিলটি শহর ঘুরে শহীদ সাটু হল মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহেদুজ্জামান ওহেদ, লেলিন প্রামাণিক, ওয়াহেদুজ্জামান বাবু। নেশাখোর, অছাত্র দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সম্মেলন না করে এবং সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান আরমানকে না জানিয়ে কুচক্রী মহলের ইশারায় কমিটি করে দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে কেন্দ্রকে ম্যানেজ করে রাতের অন্ধকারে কমিটি নিয়ে এসেছে’। তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি বাতিলের দাবি জানান। অন্যাথায় আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন। 
এ ব্যাপারে নতুন কমিটির সভাপতি সাকিউল ইসলাম সাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ পদবঞ্ছিতরা পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করছে’। অছাত্র ও নেশা করার অভিযোগটি অবান্তর উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ কেন্দ্রীয় কমিটি যথাযথভাবে অনুসন্ধান ও বিচার করেই এই কমিটি দিয়েছে’। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২১-০৫-১৫

,