৮ দিনের তিন ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে আম ফলনে বিপর্যয়ের শঙ্কা

মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর, সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় তিন দফায় বয়ে যাওয়া ঘূর্নিঝড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ির। উড়ে গেছে ঘরের টিন ও চালা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হুজরাপুর,বেলেপুকুর, নয়াগোলা, সদর উপজেলার গোবরাতলা, রানিহাটি ও সুন্দরপুর ইউ.পি, শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর, নয়ালাভাঙ্গা, ঘোড়াপাখিয়া, পাঁকা, উজিরপুর ও দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে আমগাছ উপড়ে এবং ডালপালা ভেঙ্গে যায়। সরজমিনে বুধ ও বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো ঘুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করা গেছে।
ঘূর্নিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউ.পি চেয়ারম্যান আরাফুল ইসলাম আজিজী জানান, ১১ টি গ্রামে ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে গাছপালা, বাড়ীঘর ও ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রচুর আমগাছ ঝড়ে উপড়ে ও ভেঙ্গে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে এই ঘূর্নিঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম  শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে আম ও ধানের ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করলেও বিস্ময়করভাকে তার পরিমান  অত্যন্ত কম বলে দাবী করেছেন। তিনি বলেন, ‘এতে আমের বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে, সার্বিক ফলনে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। এখনো যে পরিমান আম গাছে আছে তা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে’। তবে তিনি জানান, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
চৈত্রের শেষ হতে না হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তিনটি বড় ধরণের ঝড়। মৌসুমের প্রথম কালবোশেখী আঘাত হানে ৩০ মার্চ সোমবার। সেদিন বজ্রপাত,নৌকাডুবি, বালিতে চাপা পড়ে জেলার তিন উপজেলায় মারা পড়ে ৯ জন। এরপর ৪ এপ্রিল শনিবার সবচাইতে বড় টর্নাডোর মত ঝড়ে আম সহ ফসল,বাড়ীঘর ও বিদ্যূৎ,পানি,টেলিফোন,ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক সহ বিভিন্ন সরবরাহ লাইনের প্রচুর ক্ষতি হয়। গাছ পড়ে জেলা শহরে নিহত হয় ১ জন। এ ঝড় দুটির ধাক্কা সেরে না উঠতেই ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার পূনরায় শিলাবৃষ্টি সহ ঝড়ে জেলার প্রধান অর্থকরি ফল আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাগানের বড় বড় আম গাছ উপড়ে গেছে। ডাল ভেঙ্গে পড়েছে অনেক গাছের। ঝরে গেছে বিপুল পরিমান আম। মুকুল দেখে ভাল ফলনের আশা করলেও প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে মাথায় হাত পড়েছে আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলছেন, ওই তিনটি ঝড় বয়ে গেছে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার একাংশের উপর দিয়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই বছর ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগানে, গাছ রয়েছে ১৮ লক্ষাধিক। আর আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের সূত্র বলছে ঝড় বয়ে গেছে সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর আমবাগানের উপর দিয়ে। অবশ্য মাঠের আমচাষীরা বলছেন মৌসুমের শুরতেই কমপক্ষে একতৃতিয়াংশ আম ঝরে গেছে। অনেকেই আবার বলছেন অর্ধেক গুটিই ঝরে গেছে। ক্ষতি হয়েছে জেলার পাঁচ উপজেলার একতৃতিয়াংশ আমবাগানের। সামনে এখনও পুরো ছয়টি সপ্তাহ রয়েছে ঝড়ের মৌসুমের। কাজেই ফলন বিপর্য়য়ের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। দেশের মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত জাতগুলির সেরা আম হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ফলনও হয় দেশের মধ্যে সবশেষে। এ বছর মুকুলও এসেছিল দেরীতে। মে মাসের শেষ দিকে আম পাকা শুরু হবে। 


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ জাকির হোসেন পিংকু, নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১০-০৪-১৫