সাজাভোগের মেয়াদ শেষ > ভারতের কারাগারে ওরা ৫০জন মুক্তির প্রহর গুনছে

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫০ জন নাগরিক বিভিন্ন প্রলোভনে অবৈধপথে ভারতে গিয়ে আটকের পর সাজাভোগের মেয়াদ শেষ হলেও বাড়ি ফিরতে পারছেনা। ভারতের বিভিন্ন জেলখানায় তারা এখনও  বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। স্বজনদের কাছে ফিরে আসতে ওরা ৫০ জন মুক্তির প্রহন গুনছে। বন্দীদের পরিবারগুলি জানিয়েছে, যথাযথ আইনী সহায়তা ও উদ্যোগের অভাবে তারা বাড়ি ফিরে আসতে পারছেনা। ইতোমধ্যে পরিবারগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যায়ন পত্রও সংগ্রহ করেছে।
দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নজমুল কবির মুক্তা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ জন ভারতের বিভিন্ন জেল খানায় বন্দী আছে, তাদেও প্রায় ২০ জনের  সাজা ভোগের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও উদ্যোগের অভাবে  এবং উপযুক্ত আইনী সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনা সম্ভবা হচ্ছে না’।
তিনি জানান, সরকারের নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে  আইনগতভাবে তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সঠিক নাম, ঠিকানাসহ প্রত্যয়ন পত্র প্রত্যেক বন্দীর  অভিভাবককে  প্রদান করা হয়েছে। সেই প্রত্যায়ন পত্র নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করার কথা রয়েছে। একই ধরনের কথা বললেন বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহবুল হক।
গত কয়েক দিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত শিবগঞ্জ উপজেলার ৫০ জন ভারতে গিয়ে বন্দী জীবন যাপন করছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তারা হচ্ছেন, দূর্লভপুর ইউনিয়নের ১৫ রশিয়া গ্রামের সলেমানের ছেলে রহিম, তোজাম্মেলের ছেলে সুজন, মোজাফরের ছেলে কাইউম, পিয়ালীমারী গ্রামের ইউনুসের ছেলে মিজানুর, চল্লিশরশিয়া গ্রামের আসামুদ্দিনের ছেলে আঃ খালেক, পিয়ালীমারী গ্রামের উসমানের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন,৩৩ রশিয়া গ্রামের মোসারফের ছেলে আনারুল, ১২রশিয়া গ্রামের মৃত কুদ্দুসের ছেলে মাশিরুল , এস্তাব আলির ছেলে জিয়ারুল,  চাঁপাই সদরের জিয়ানগর গ্রামের নাজিরের ছেলে জাহাঙ্গীর, বিনোদপুুর ইউনিয়নের রসুনচক সাতরশিয়া গ্রামের মোহবুলের ছেলে জোহর, মনাকষা ইউনিয়নের মনাকষা গ্রামের আকালুর ছেলে আনোয়ারুল, সাহাপাড়া গ্রামের মৃত পুটুর ছেলে তোসলিম, পারচৌকা গ্রামের  মৃত মন্টুর ছেলে রিপনসহ প্রায় ৫০ জন। তারা ভারতের মনিপুর জেলখানাসহ বিভিন্ন জেলখানায় বন্দী জীবনযাপন করছে। এসব বন্দীর পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে আসার পথ চেয়ে বসে আছে।
মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের মুনিরা আখতার মায়া বলেন ‘২০১২সালের ১৮ আগস্ট আমার পিতা তোসলিম বাড়ি থেকে সাহাপাড়া বাজার যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে বের আর ফিরে আসেনি’। এলাকাবাসির ধারণা কোন গরু ব্যবসায়ী তাকে ভারত পাঠালে সে বিএসএফের হাতে ধর পড়ে জেলখানায় আটকা আছে। কারণ মারা গেলে কোন না কোনাভাবে খবর আসতো বা তার লাশ পাওয়া যেত। একই ভাবে পারচৌকা গ্রামের মৃত মুন্টুর ছেলে দুুই বছর আগে ভারতে গরু আনতে গিয়ে ফিরে আসেনি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সে ভারতে জেলখানায় বন্দী  আছে।
ভারতে জেলখানায় বন্দী থাকা দূর্লভপুর ইউনিয়নের ১৫রশিয়া গ্রামের রহিমের পিতা সলেমান বলেন, ‘২০১২সালের আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এলাকার জনৈক গরু ব্যবসায়ী আমার অজান্তে আমার ছেলে রহিমকে ভারতে গরু আনতে পাঠালে কয়েক দিন পর জানতে পারি যে আমার ছেলে ভারতের ইমফল প্রদেশের মনিপুর জেল খানায় রয়েছে। তিনি আরো বলেন আমার ছেলের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও  এখনো বাড়ি আসতে পারেনি। পরিবারগুলির দাবী সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনা হোক।
এদিকে বৃক্ষপ্রেমিক কার্তিক পরমানিক ভারতের বন্দীদের ছাড়িয়ে আনতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা  করে আসছেন। তিনি প্রায় ২৫বন্দীর পরিারকে আবেদন করানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন ‘কোন প্রলোভনে বা ভুল করে তারা ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে আটকা পড়েছে, তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য আমাদের সবার সহযোগিতা করা মানবিক দায়িত্ব’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ১৭-০৪-১৫

, ,