অচেতন করার চেষ্টা না করেই গুলি > সীমান্তে হাতি হত্যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলি করে ভারত থেকে আসা দলছুট হাতিটিকে হত্যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী তারাপুর গ্রামে। অভিযোগ উঠেছে, হাতিটিকে অচেতন করার কোন চেষ্টা না করেই পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হলেও, তাঁর ভূমিকা ছিল ‘নিধিরাম সর্দার’ এর মতোই। হাতি অচেতন করার কোন কৌশলই তিনি জানতেন না।
মঙ্গলবার বিকালে হাতিটিকে হত্যার পর বুধবার সকালে তারাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারাপুর-হঠাৎপাড়া গ্রামের জহরুল ইসলাম জানান, হাতিটিকে যখন গুলি করা হচ্ছিল, তখন তার ডাক শুনে খুব মায়া হচ্ছিল। সে বারবার ছুটে পালাচ্ছিল বাঁচার জন্য। কিন্তু একের পর এক গুলি শরীরে লেগে এক পর্যায়ে হাতিটি পড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই গ্রামের বাসিন্দা বৃক্ষপ্রেমিক খ্যাত কার্তিক পরামানিক জানান, হাতিটিকে অচেতন করার কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এই উদ্যোগে নিলে বিশাল এই প্রাণীটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো। তিনি বলেন, হাতিটি কোন দেশের সেটা বড় কথা নয়, একটি বন্যপ্রাণীকে এভানে মেরে ফেলা দায়িত্বহীনতার মধ্যেই পড়ে। জহরুল ইসলাম ও কার্তিক পরামানিকের মতো আরো কয়েকজন একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, প্রশাসন বারবার  ‘সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে’ অজুহাত দেখালেও বেলা ৩ টা ১০ মিনিটের দিকেই গুলি করা শুরু করে। সন্ধ্যা হতে তখনো অনেক সময় বাকী ছিলো।
তবে আলমগীর হোসেন, আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজন বলেছেন, হাতিটি এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করায় ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাতিটিকে হত্যা করা না হলে ক্ষতি আরো বাড়তো।
শিবগঞ্জ থানার ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম জানান, সকাল থেকেই হাতিটি নিয়ে হুলুস্থুল হয়ে পরে যায় ওই এলাকায়। এলাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার কথা ভেবেই শেষ পর্যন্ত হাতিটিকে গুলি করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিজিবি ৩৪ রাউন্ড ও পুলিশ ১৯ রাউন্ড গুলি করে হাতিটির মৃত্যু নিশ্চিত করে। হাতিটিকে অচেতন করা হলোনা কেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন বিভাগের যে কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তিনি এই সম্পর্কে কিছুই জানতেন না এবং তার কাছে ওই ধরণের কোন উপকরণও ছিলনা। ওসির এমন বক্তব্য স্বীকার করে নেন শিবগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, এই বিষয়ে তাঁর কোন ধারনা নেই।  রাজশাহী থেকে বণ্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ একটি দল বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারেন নি। ওই দলটি যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তার আগেই হাতিটিকে হত্যা করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ ফয়সাল মাহমুদ/ ২১-০৪-১৫

,