ডায়রিয়া > পৌরসভার পানিতেই ধরা পড়েছে কলিফরম ব্যাক্টেরিয়া > একজন নিহত (বিস্তারিতসহ)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পরা ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নতুন নতুন রোগি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত রোগিদের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে মারা গেছেন একরামুল হক নামের এক বৃদ্ধ। হাসপাতালে রোগি ভর্তি অব্যাহত থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে পরিস্থিতি একটু ভালর দিকে। এদিকে, এদিকে ডায়ারিয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো পৌরসভা সাপ্লাই পানিতেই ধরা পড়েছে সংক্রামক। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গেল ৫ দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫ শতাধিক রোগি ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১ শ’ জন করে রোগি ভর্তি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবা দুপুর পর্যন্ত হাসাপাতালে ভর্তি ছিল ৬১ জন। এর আগে বুধবার ভর্তি হয় ১শ ৩৯ জন এবং মঙ্গলবার ৯১ জন।
ওই সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারই ডায়ারিয়ায় আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুরের একরামুল হক (৬০) দুপুর দু’টার দিকে মারা যান। গেল ৫ দিনের ব্যাপক ডায়ারিয়ায় আক্রান্তের মাঝে এই প্রথম একজন নিহত হলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগি হাসপাতালের বারান্দায় গাদাগাদি করে অবস্থান করছে। মাত্র ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়িয়ে রোগিরা হাসপাতালের বারান্দা এমনকি কোরিডোরেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের একজন সেবিকা বলেন, ‘আগেও ব্যাপকহারে ডায়রিয়া হয়েছে। রোগিরা হাসপাতালের পুরতান ভবনেই চিকিৎসা নিয়েছে। কিন্তু এবার কেন জানি মহামারির মত আকার ধারণ করেছে। বারান্দা কোরিডোর সব যায়গায় শুধু ডায়রিয়ার রোগি। আমাদের অবস্থা কহিল। এতরোগি সেবা দিতেই হিমশীম খাচ্ছি’।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগি পৌর এলাকার পোল্লাডাঙ্গা গ্রামের নাসেরা খাতুন বলেন, ‘ হটাৎকরেই একবার বমি হওয়ার পর পানির মত পায়খানা শুরু হয়। তার পরপরই হা-পা অবশ হতে শুরু করে’। একই এলাকার নাজমা খাতুন বলেন, ‘দু’ দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে ১১টি স্যালাইন নিয়েছি। তবুও ডায়রিয়া ভাল হচ্ছেনা’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র কামাল উদ্দীন বলেন, ‘ মেসে রাত ১০টার দিকে পৌরসভার সাপ্লাই পানি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ি। ১২টার দিকে হটাৎ শরীরটা খারাপ লাগলে বিছানা থেকে উঠা মাত্রই বমি শুরু হয় এবং লুঙ্গিতেই পায়খানা হয়ে যায়। তারপর পড়ে গেলে বন্ধুবান্ধব মেস থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে’।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইনের পানি দুষিত হওয়ার কারণেই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রথমে দু’ একটি এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দিলেও পরে তা অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ মুলত দুষিত পানি পান করার ফলেই এই ডায়রিয়াটা হয়েছে। ডায়ারিয়া ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার পর পৌরসভার সাপ্লাই পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ওই পানি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। তাতে কলিফরম ব্যাক্টেরিয়া ধরা পড়েছে’। তিনি বলেন, ‘খাবার পানিতে সাধারণত কলিফরম ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া য়ায়না। কিন্তু যে কোন কারণে কিংবা কোনভাবেই হোক ট্যাপের পানি কোন যায়াগা লিকেজ হয়ে এ ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত হয়েছে। যে কারণেই ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে’।
তিনি বলেন, ‘ কলিফরম ব্যাক্টেরিয়া এ্যাজিথ্রোমাইসিন ও সিপ্রোসিন এ্যান্টিবায়োটিকের সেনসেটিভ। আমরা সে অনুযায়ী রোগিদের চিকিৎসা দিচ্ছি’।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার অনেক রোগিকে বাইরে থেকে ঔষুধ কিনে আনতে দেখা গেছে। রোগিরাও অভিযোগ করেছেন, হাসপাতাল থেকে যথাযথ ঔষধ না পাওয়ার ব্যাপারে। তবে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য স্বাস্থ কেন্দ্রগুলো ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যপ্ত স্যালাইন ও ঔষুধ আনা হয়েছে। অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্স নিযুক্ত করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছু উন্নতির দিকে।
স্মরণকালের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়া দেখা দেয়ায় সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি পান, বিশুদ্ধ পানি না পাওয়া গেলে পানি ফুটিয়ে পান, বাসি ও খোলা যায়গার খাবার না খাওয়া এবং খাবার আগে হাত ভাল করে ধুয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৯-০৪-১৫

,