শিশু লফিতা ও আঁখি হত্যাকান্ড > সন্দেহভাজন দু’ মহিলা আটক > আত্মংকে স্কুল যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়নের চরকানছিঁড়া গ্রামের আখিঁ ও  লতিফা নামে দুই শিশুকে  অপহরণের পর হত্যা ঘটনায় বুধবার রাতে শিবগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনকভাবে দুই মহিলাকে আটক করেছে। এদিকে, এ নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। বিরাজ করছে আতঙ্ক। আত্মংকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ স্কুলে যাওয়া বন্ধা করে দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরজমিনে কানছিড়ায় গেলে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা ঐ দুই  মেয়ের মাসহ স্থানীয় মানুষজনের। লতিফার শোকাতুর মা হাসয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে লতিফা ২৮মার্চ মক্তব থেকে ফিরে এসে আকন্দা ফুলের  মালা গাঁথার জন্য সুঁচ চাইলে  সুঁচ না দেয়ায় মালা তৈরী করতে না পারায় সে ঘর থেকে মন খারাপ করে বের হয়ে গেছিল। সেই যে গেল আর ফিরে এলোনা’। তিনি বলেন, ‘আমার  তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে সে ছিল ছোাট ও আদরের। আমার আদরের ধনকে কে কেড়ে নিল?’। অন্যদিকে শোকে পাথর আঁখি’র মা লিপি বলেন, ‘সেদিন  বেলা ১টার দিকে স্কুল শিক্ষক শরিফুল এসে আখিঁ ও  লতিফা  স্কুল যায়নি বললে আমরা তখন থেকেই অনেক খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বুধবার এলাকার সাইদুর খবর দিলে জানতে পারি আমার নয়নমনিকে তারা মেরে ফেলেছে’।
এলাকার সফিকুলের স্ত্রী রমিসা বেগম জানান, লতিফা ও আঁখি ছিল দু’ বান্ধবি। এক সাথে খেলাধুলা করতো। ওদিন আমার বাড়ি আঙ্গিনা দিয়ে পেছনের বাগানে চলে যায়। আজো মনে পড়ছে তাদের হাসতে হাসতে চলে যাবার দৃশ্য।
এলাকার বাবলু মেম্বার, সাইফুদ্দিন, শাহজাহান, মোস্তফা, একরাম, খাইরুুল, পলাশ, জিল্লুরসহ কথা হয় আরো অনেকজনের সঙ্গে। তারা জানান, এলাকার কোন মানুষের সঙ্গে লতিফা ও আঁখি’র পিতার বড় ধরণে শত্রুতা ছিলনা। তারা প্রশ্ন করেন তবুও কেন এই নির্মম হত্যাকান্ড। এলাকাবাসীর ধারণা, এলাকার প্রভাবশালী এককালের গরু ছিনতাইকারী বর্তমানে নারী ও শিশু পাচারকারীর চক্রই অঙ্গ প্রতঙ্গ বিক্রির জন্য শিশু দু’টিকে হত্যা করে থাকতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক মানুষ জানান, দুর্লভপুর ইউনিয়নের দ্বোভাগি গ্রামের ৩০/৩৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ গরু পাচার. ছিনতাইসহ সীমান্ত এলাকার অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্র বহু অপরাধ কর্মাকান্ড চালিয়ে আসছে বহুদিন আগে থেকে।
লতিফার ভাই বাবু জানান  সফিকুলের বাড়ির পিছনে যারা আম বাগানে আমের গাছে বিষ দিচ্ছিল তারাই আমার  বোন ও আখিঁকে প্রথমে অপহরণ ও পরে হত্যা করে।
এদিকে, শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজের পর মাওলানা নুহ আলম দলবল নির্বিশেষে সকলে দূষ্কুতিকারীদের ধরার আহবান জানালে এ ব্যাপারে সকলে একমত পোষণ করেন।
লফিতা ও আখি হত্যাকান্ডের পর এলাকার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মংক দেখা দিয়েছে। চরতারাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এঘটনার পর বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতির সংখ্যাা অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং নিজেও চরম আতঙ্কেরে মধ্যে আছি’।
অন্যদিকে, দু’ শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের মামলার আলোকে পুলিশ সন্দেহভাজন দুই নারীকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তাদের আটক করা হয়। শিবগঞ্জ থানার ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম জানান, আটককৃতরা হলেন, দোভাগী গ্রামের আরিফের স্ত্রী আসনারা বেগম (৩০) ও আনারের স্ত্রী আক্তারা বেগম (২৫)। তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। এরা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ০৩-০৪-১৫