পেট্রোল বোমা মেরেই গতিরোধ অতঃপর পেট্রোল বোমার ‘ছোবলে’ পুড়ে কয়লা চালক ॥ আগুন নিয়ে লাফিয়ে পরা সাকিল হাসপতালের বিছানায় নির্বাক ॥ পাশে কেউ নেই

অবরোধ হরতাল চলাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট কলাবাড়ি বাঁশপট্টিতে নাশকতাকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় নিহত কাভার্ড ভ্যান চালক শিপনের লাশ মঙ্গলবার রাতে ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে শিপনের ভাই হাসান আলীর কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ পরিবহন ও দাফন কাজের জন্য ২৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
পেট্রোল বোমায় পুড়ে ‘কয়লা’ ভায়ের লাশ নিয়ে রাতে ভোলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার উদ্দেশ্যে ফিরে গেছেন ভাই হাসান আলী।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটিকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নানা মহলে নানান সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোনামসজিদ স্থল বন্দরে পণ্য আনার জন্য যাওয়া কাভার্ড ভ্যানটি কলাবাড়ি বাঁশপাট্টির কাছে পৌছলে ১২/১৩ জনের নাশকতাকারী পেট্রোল বোমা মারলে কাভার্ডভ্যানটি মহাসড়কের ডানদিকে চলে যায়। পরে ওই ডান দিক থেকেই আবারও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। কাভার্ডভ্যানের ডানদিকে চালকের আসনে বসে থাকা শিপনের শরীরে এসে পড়ে পেট্রোল বোমা। মুর্হুতেই চালকের গোটা শরীরে আগুন লেগে যায়। এতে চালকে আসনেই বসে পুড়ে মারা যায় চালক শিপন।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, কাভার্ডভ্যানে আগুন লাগার পর শরীরে আগুন নিয়ে লাফিয়ে পড়ে কাভার্ডভ্যানের সহকারী (হেলপার) সাকিল। প্রাণ বাঁচাতে আত্মংকে দৌড়াতে শুরু করে। কিছুদূর গিয়েই পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা এসে তার গায়ের আগুন নেভায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস’র উপপরিচালক অহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে সকালে ৬টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌছে কাভার্ডভ্যানের ভেতর থেকে চালকের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, দগ্ধ হেলপার সাকিলকে প্রথমে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিলের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় দ্রুত একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠিয়ে দেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তোহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ আগুনের যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকার সাকিলের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে দ্রুত রাজশাহীতে রেফার্ড করে দেই’।
এদিকে, রাজশাহীর গণমাধ্যম কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে জানিয়েছেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের বেডে নিথর দেহ পড়ে আছে। হাত-পা, মুখমন্ডল পুড়ে গেছে। হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা নিথর দেহটায় কোন সাড়া নেই। মুখের ঠোট দুটো শুধু কাঁপছে। নির্বাক সাকিলের পাশে পরিবারের কেউ নেই। হাসপাতালের সেবিকারা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আহ হা আহা করছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শাকিলের শ্বাসনালি, মাথা, চোখ-মুখসহ কোমর পর্যন্ত পুড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা হক বলেন, 'শাকিলের শ্বাসনালিসহ শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে গেছে। এই অবস্থায় একজন রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য ভাগ। তার পরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাঁর জন্য।'
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, শিশুটির সঙ্গে কেউ না থাকলেও তাঁরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৪-০৩-১৫

,