শিশু কবিতা হত্যাকাণ্ড ॥ ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ শিহাব-সাগরের মৃত্যুদণ্ড (বিস্তারিত ভিডিওসহ)

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর এলাকার বটতলাহাট সংলগ্ন কালিগঞ্জ ফুলবাগানের চার বছরের নিষ্পাপ শিশুকন্যা কবিতা হত্যা মামলার দু’ প্রধান আসামী ‘ ঠান্ডা মাথার খুনি’ শিহাব ও সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আদালত। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। মঙ্গলবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় এই দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর আবুরাজপাড়া গ্রামের এমরান আলীর ছেলে শিহাব রেজা (২৪) ও তার বন্ধু শংকরবাটি এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে সাগর আহম্মেদ (২৪)। দু’ আসামীর উপস্থিতিতেই এ রায় প্রদান করা হয়।
মামলার অপর আসামী সিহাবের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম (৩৮) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া আদালত তাকে খালাস প্রদান করে।
মামলার বিবরণ ও কবিতার স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, গত বছরের ৩০ আগষ্ট বেলা ১১টার দিকে পৌর এলাকার কালিগঞ্জ ফুলবাগানের কবিতার মতই নির্মল কোরবান আলীর চার বছরের শিশুকন্যা কবিতা বাড়ির সামনে খেলা করছিল। এসময় কোরবান আলীর খালাতো ভাই শিহাব ও সাগর কবিতাকে অপহরণ করে। পরে তাকে বাড়ির ছাদের উপর অব্যবহৃত রান্না ঘরের নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। কবিতাকে হত্যা করার পরও শিহাব ও সাগর পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এমনকি ঠান্ডা মাথার খুনি শিহাব কবিতাকে অপহরণের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরজুড়ে মাইকযোগে কবিতা’র নিখোজ সংবাদ প্রচার করে এবং কুরবান আলীর পাশে থেকে কবিতার উদ্ধার তৎপরতার জন্য র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছেও যায়।
এদিকে কবিতাকে হত্যার শিহাবের বড় ভাই জহিরের বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে রাখে। দু’দিন পর দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে শিহাব সাগর সেখান থেকে লাশ তুলে একটি ট্রাভেল ব্যাগে করে নিয়ে গিয়ে পোল্লাডাঙ্গা স্কুল সংলগ্ন মনসুরের চাতালের পেছনে মাটির নিচে পুতে রাখে। অন্যদিকে একটি সেল ফোন থেকে কুরবান আলীর কাছে দাবি করা মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষে কৌশলী হয়ে তারা হত্যাকরার পরেও কবিতাকে দেখাবার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে তারা আদায় করে নেয় ২৫ হাজার টাকা। বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করা হলে ওই সেল ফোনের সূত্রধরে ৪ সেপ্টেম্বর শিহাব ও সাগরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদের স্বিকারোক্তি অনুযায়ী ওই দিন রাতেই র‌্যাব কবিতার গলিত লাশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে কবিতার পিতা কোরবান আলীর দায়ের করা মামলায় ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ দ-াদেশ প্রদান করে।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত শিহাব ও সাগরকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে কবিতার লাশ উদ্ধারের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকম-এ প্রকাশ করা সংবাদেও তাদেরকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ উল্লেখ করা হয়েছিল।
লোমহর্ষকর এ হত্যকান্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও হত্যাকারীদের ফাঁসি’র দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছিল।
ঘটনার চার মাস পর প্রদান করা মামলার রায়ে কবিতার পিতা কোরবান আলী ও সরকারি কৌসুলি (পিপি) জোবদুল হক সন্তোষ প্রকাশ করেন। এক প্রতিক্রিয়ায় কবিতার পিতা কোরবান আলী দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৪-০২-১৫

,