কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ভয়াবহ হামলার দু’ বছর ॥ ওইদিন আগুনে পুড়ে মরতে বসেছিল ৭০ পরিবার

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাদে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভবনে চালানো হয়েছিল ভয়াবহ হামলা। সেই দিনের হামলায় পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র মুল অফিস, কোয়ারটার, বিদ্যুতের উপকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরাঞ্জম। ওইদিন আগুনে পুড়ে মরতে বসেছিল ৭০ পরিবার। বিভিষিকাময় ওই নারকীয় হামলায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২ শ কোটি টাকা। শনিবার সেই বিভিষিকাময় হামলার দু’বছর পুর্তি। নারকীয় হামলার ঘটনায় জামায়াত বিএনপি নেতা-কর্মীকে দায়ি করা হয় এবং এ ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের হয় জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও। তবে মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি এখনও। এ নিয়ে হতাশ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
ওইদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার পর দুপুরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ কর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় কানসাট পল্লী বিদ্যুৎকেন্দ্রে । তারা প্রথমেই মূল ফটকে হামলা চালালে প্রাণভয়ে পালিয়ে যান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও ভয়ে তারা কাছে ভিড়েনি। হামলাকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাব-স্টেশন ও সমিতি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী হাসান শাহ্ নাওয়াজ বলেন, ‘কানসাটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তরে ঐদিনের ঘটনায় মূলভবন, ৫টি আবাসিক কোয়ার্টারের ২৫টি পরিবারের বাসা, মটর গ্যারেজ, ষ্টোরেজ, পাওয়ার সাপ্লাই রুম, সুইচ রুম, রেষ্ট হাউজে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আগুন দেয়ায় পুরোটায় ভস্মিভুত হয়। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে আগুন দেয়ায়  একাংশ পুড়ে যাওয়ায় গোটা শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং ৪ মাস বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় নষ্ট হয় প্রায় ১২’শ হেক্টর জমির ফসল’।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র কর্মকর্তারা বলেন, ‘ ওইদিন সন্ত্রাসীরা সমিতি’র কোয়াটারেও হামলা চালায়। এসময় কোয়ার্টারে থাকা পরিবারগুলোর সোনার গহনা, নগদ টাকা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার লুটপাট হয়। কোয়াটারগুলোতেও আগুন দেয়ায় ওই দিন আগুনে পুড়ে মরতে বসেছিল ৭০ পরিবার’।
এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তৎকালীন এজিএম রেজাউল করিম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা দায়ের করেন।  তবে এসব মামলার আসামীরা রয়েছে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি ময়নুল হক জানান, দায়ের মামলার অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। পলাতক আসামীদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পিপি এ্যাডভোকেট যবদুল হক জানান, ৩ টি মামলার চার্জসীট দাখিল হলেও জি.আর- ১১১/১৩ (শিব) মামলাটির আসামী পক্ষ হাইকোর্টে ষ্টে-অর্ডার এবং পরবর্তীতে ষ্টে-অর্ডার ভ্যাকেট হলে আসামী পক্ষ সুপ্রীম কোর্টে লিভ টু আপিল দায়ের করলে মামলাটি পেন্ডিং রযেছে, জি.আর- ১১২/১৩(শিব) মামলাটি নি¤œ আদালত থেকে বদলী হয়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিশেষ ক্ষমতা-১০৮/১৪ হিসেবে মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যুর(ড/অ) এবং অপরটি জি.আর- ১১১/১৩ (শিব) মামলাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যুর(ড/অ) আদেশ হয়ে আছে।
জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী’র রায় ঘোষণার পর শুধু কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভবনই নয়, হামলা চলানো হয়েছিল সোনামসজিদ পর্যটন মোটেলেও। ওই দিন নিহত হয়েছিলেন পর্যটন মোটেলের প্রকৌশলীও। এছাড়া স্থাপনা, যানবহনে আগুন, ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটে ভোলাহাটসহ সদর উপজেলাতে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৮-০২-১৫