গোমস্তাপুরে আরো ২টি গ্রামকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরে বেসরকারী সংস্থা সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্স (সিএমইএস)’র নয়াদিয়াড়ী ইউনিটের উদ্যোগে আরো দু’টি গ্রামকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে গোমস্তাপুর উপজেলার রাজারামপুর ও বেগমনগর গ্রামকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষনা করেন গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদেকুল ইসলাম। এ উপলক্ষে এলাকার কিশোরীরা একটি র‌্যালী বের করে। পরিষদ চত্বরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গোমস্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন মন্ডল, সিএমইএস নয়াদিয়াড়ী ইউনিটের অর্গানাইজার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, ওয়ার্ড সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, রাজারামপুর গ্রামের ফলোআপ কমিটির সভাপতি আমিনুল হক, বেগমনগর গ্রামের ফলোআপ কমিটির সেক্রেটারী শরিফুল ইসলাম, ইউনিটের কিশোরী কর্মসুচী জেন্ডার অর্গানাইজার জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যরা। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ২ গ্রামের অভিভাবকগণ ও কিশোরীরা। এর আগেও ইউনিটের উদ্যোগে ৪টি গ্রামকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে গোমস্তাপুর উপজেলার শিমুলতলা ও নাচোল উপজেলা ফতেপুর ইউনিয়নের দেবিনগর গ্রাম ও ২০১৩ সালে গোমস্তাপুর উপজেলার খোসালপাড়া ও সানপুর গ্রামকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ২টি গ্রামের মধ্যে রাজারামপুরে লোকসংখ্যা ১ হাজার ৩’শ ৬৮ জন এবং বেগমনগরে লোকসংখ্যা ১ হাজার ৬’শ ১০ জন। ইউনিটের উদ্যোগে ১২ থেকে ১৯ বছরের ১ হাজার জন কিশোরীকে নিয়ে ২৫টি কিশোরী সমিতি ও ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫’শ তরুনীকে নিয়ে ২৫টি তরুনী সমিতি গঠন করা হয়। এসব সমিতিতে নারী ক্ষমতায়ন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনামূলক ও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়। ১৯৯৩ সালে নয়াদিয়াড়ী ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকায় বাল্য বিয়ে, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, নারী অধিকার, শিশু পাচার রোধ, বৃক্ষ রোপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। প্রধান অতিথি বলেন, বাল্য বিবাহ মুক্ত রাখার জন্য শুধু আইন দিয়েই হবে না, সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় অভিভাবকরা আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে বর-কনে নিয়ে গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন। নিকা রেজিষ্ট্রারগণও বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে থাকেন। ওয়ার্ড সদস্যরাও অজ্ঞাত কারণে ছেলে-মেয়েদের বয়স লুকিয়ে জন্মনিবন্ধন পত্র দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রশাসনের কঠোর আইনী ব্যবস্থা থাকলেও সকল বাল্য বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয় না। অভিভাবকগণসহ সমাজের সকলকে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সম্ভব সমাজ থেকে বাল্য বিয়ে বন্ধ করা। শেষে ইউনিটের কিশোরী-তরুণী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ২টি গ্রামকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করেন এবং সকলকে শপথ করান। শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গম্ভীরা গানের মাধ্যমে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আসাদুল্লাহ/ ২৭-১১-২০১৪