রাজশাহীতে দু’ কক্ষের বিশ্ববিদ্যালয় > সীলগাল
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ হাফিজুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে 'প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি
অব টেকনোলজি'র ক্যাম্পাসটিকে
অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ-সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার
দুপুরে ক্যাম্পাসটি
উচ্ছেদ করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্যাম্পাসটির দুই কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে বেশ কিছু আসবাব, দুটি কম্পিউটার, দাপ্তরিক কিছু কাগজপত্র, পরীক্ষার খাতা, বিপুল পরিমাণ সিডিসহ বেশ কিছু মাল জব্দ করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণিকক্ষের পাশের একটি ছোট ঘরের দরজার সামনে লেখা আছে 'লাইব্রেরি রুম'। তবে দরজা খুলে দেখা যায়, কক্ষটি রান্নাঘর। সেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সিডি। এগুলো কোনোটি সিনেমা গানের আবার কোনোটি ফাঁকা। ওই কক্ষের পাশেই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অফিসকক্ষ। এখানে বসে আছেন একজন কর্মকর্তা। নাম তাঁর মোহাম্মাদ ইব্রাহীম শেখ। কী পদে আছেন- জানতে চাইলে ইব্রাহীম 'আমি এক্সিকিউটিভ
ডিরেক্টর।' তাঁর এই অফিসকক্ষে ছিল দুটি কম্পিউটার, একটি টেবিল এবং কয়েকটি সেলফ। এই সেলফগুলোর ভেতর থেকেই বের হয়ে এলো বিভিন্ন ফাইল। এই ফাইলপত্রের মধ্যে রয়েছে ছাত্রভর্তি বাবদ কমিশন বাণিজ্যের একটি মানি রসিদসহ ২৪ জন শিক্ষক এবং ৪৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির তালিকা।
ক্যাম্পাসটির নির্বাহী পরিচালক ইব্রাহীম দাবি করেন, এক বছর ধরে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে আটটি বিষয়ে। তবে প্রসপেক্টাসে সব মিলিয়ে ১২টি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা বলা হয়েছে। ভর্তীকৃত রেজিস্টারেও ওই সব বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করার প্রমাণ মেলে। এলএলবিসহ ১২টি বিসয়ে গত এক বছরে ৪৯ শিক্ষার্থী ভর্তির পেছনে দালালদের কত টাকা কমিশন দিতে হয়েছে, সেটিও রসিদে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে বিবিএর রাকিব হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য দালালকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রসিদে।
বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাহী পরিচালক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, 'শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। তাই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়। প্রথমে ভর্তির পর পরই দালালদের কমিশন দিয়ে দিতে হয়। এতে অনেক সময় ভর্তির সব টাকায় দালালদের পকেটে চলে যায়। পরের সেশন ফি ঢোকে আমাদের পকেটে।'
প্রতিষ্ঠানটির তালিকাকৃত ২৩ জন শিক্ষকের মধ্যেও একজনকেও স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সদ্য পাস করা বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষক বানিয়ে তাঁদের ৫০০ টাকা করে ক্লাস ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয় বলেও নিশ্চিত করেছেন ইব্রাহীম। ক্যাম্পাসের ফাইলে সংরক্ষিত শিক্ষকদের মোবাইল নম্বরসহ নামের তালিকা থেকে ফোন করা হয়, সিভিল বিভাগের শিক্ষক তাসনুভা হুমাইরাকে। তিনি বলেন, 'ওই ক্যাম্পাসে যোগদান করেছিলাম। কার্যক্রম পছন্দ না হওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি।'
ইব্রাহীম শেখ আরো জানান, তিনিসহ ক্যাম্পাসটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন চারজন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা এম এন হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ক্যাম্পাস আছে। রাজশাহীতেও তিনটি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু একটিতে কেন সমস্যা হলো, তা বুঝতে পারছি না। রবিবার আমি রাজশাহী গিয়ে বিষয়টি দেখব।' তিনি আরো জানান, রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া, উপভদ্রা ও জেলার বাগমারার ভবানীগঞ্জে একটি করে মোট তিনটি শাখা আছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, 'কেন এইভাবে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে বাড়িভাড়া দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ করে দেওয়া হলো, এর জন্য বাড়ির মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে তিনি না থাকায় তাঁকে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সদুত্তর না পেলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-কালের কণ্ঠের সৌজন্যে