দারিদ্রতার কষাঘাতে মফস্বল সাংবাদিকতা : শফিকুল ইসলাম

স্কুল জীবনে অধীর আগ্রহে তীর্থের কাকের মত অপোয় ছিলাম, কখন এসএসসি পাশ করবো, তবে  প্রগতিশীল ্একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক  একটি দলের সমর্থক হিসাবে মিছিলে সমবেত হয়ে চিৎকার করে মিছিলে শ্লোগান দিতে পাবো। একদিন  সে স্বপ্ন পূরন হলো।
১৯৮৩ সালে এসএসসি পাশ করে  আদিনা কলেজে ভর্তি হবার কয়দিন পরেই শ্লোগানের ডাক শুনে কেউ না ডাকার আগে নিজে থেকে মিছিলে যোগ দিয়ে মহা আনন্দ ভোগ করলাম এবং সমর্থক হিসাবে কলেজ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই দলের সমর্থক হিসাবে টিকে ছিলাম। যদিও প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা কোনভাবেই দলটিকে মেনে নিতে না পারাই তারা আমাদের উপর বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
 এত ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কলেজ জীবনেই কেন যেন সাধ হলো সাংবাদিক হবো। দেরী না করে আমার ছাত্র নেতার সংগে আলাপ করলে তিনি প্রথমে এলাকার মানুষকে পত্রিকা সম্পর্কে সতেচন হবার পরামর্শ দিয়ে মনাকষা বাজারে তিনি পত্রিকা ও রাজনৈতিক বইয়ের দোকান দেনএবং আমি শিবগঞ্জ থেকে হকারের কাছ থেকে নিয়মিত পত্রিকা নিয়ে তাকে দিতাম এবং তিনি  বিক্রী করতেন। দুই জনের কিছু লাভ না  হলেও এলাকায় পত্রিকার পাঠক বাড়াতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কারন তার আগে শিবগঞ্জে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মাত্র কয়েকজন মানুষ ডাকযোগে পত্রিকা নিতেন। আরো একটি লাভ হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি  পরীায় সাধারন ঞ্জান সহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ হয়েছিল। যা ভর্তির েেত্র অনেকটা উপকার হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে রীতিমত কয়েকজন নামধারী সাংবাদিকের পিছনে ঘুরতে শুরু করেছি। তারা আমার জীবন বৃত্তান্ত  ও ছবি নিলো আমার নামে  দরখাস্ত করার জন্য। কিছুদিন পর প্রমান হলো তারা আমার সাথে প্রতারনা করেছে। প্রতারনার যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে  ৫টি বছর কেটে গেছে। কলেজে চাকুরীতে যোগদান করার পূর্বে ১৯৯৫সালে এপ্রিল মাসে সোনামসজিদে চোরাচালান রোধে বিডিআর এর উদ্যোগে এক সভায় বর্তমান দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মোহাঃতসলিম উদ্দিনের বক্তব্য শুনে আবার সাংবাদিক হবার সাধ জাগলো। আবারো আমার সেই নেতাকে আমার আকাংখার কথা বললাম।
 ১৯৯৭সালে মার্চ এপ্রিল মাসের দিকে তিনি আমাকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার  সম্পাদকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং আমার আাকাংখার কথা তাকে জানান। সেই থেকে আমার সাংবাদিকতা শুরু। যেখানে কোন ঘটনা ঘটে সেখানেই ছুটে গেছি এবং তথ্য নিয়ে সংবাদ তৈরীর চেষ্টাকরেছি। কিন্তু একটি সংবাদ পত্রিকায় ছাপা  না হওয়ায় শুরু হয় মানসিক যন্ত্রনা। এ যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে একদিন ভারতে আম পাচার সম্পর্কে একটি সংবাদ হাতে লিখে ডাক যোগে পাঠালাম। এর প্রায় ১৫ দিন পর আমি  একদিন সাইকেলযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গিয়ে সম্পাদকের সাথে দেখা করলে তিনি প্রথমেই পরিচয় নিয়ে ধাতানী  দেয়ার পর অনেককিছু শিা দিলেন এবং আমের পাঠানো সংবাদটি ছাপানো হয়েছে বলে দেখান। সেদিন আমার কাছে যেন একটি স্মরনীয় দিন। আমি যেন খুশিতে টগবগ করছি। কিছুদিন পর সাপ্তাহিক পত্রিকাটি দৈনিকে রুপান্তরিত হওয়ায় আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং কলেজ শেষে প্রতিদিন ২০/২৫ কিঃমিঃ সাইকেল চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে যেভাবেই  হোক না কেন অফিসে পৌঁছেয়েছি।
 এভাবে অনেক দিন চলার পর আমার সেই নেতাকে বললাম অনেকদিন থেকে সাংবাদিকতা করছি কোন বেতন দিচ্ছেনা । তিনি বললেন ওরা তো বেতন দেবেইনা, বরং কিছু নিবে। তবে তিনি এবারও পরামর্শ দিলেন কিছু বিঞ্জাপন সংগ্রহ করতে। এভাবেই চলল প্রায় বছর দুয়েক। তারপর স্থানীয় কিছু সাংবাদিক আমাকে সাংবাদিক হিসাবে মানতে রাজী নন। তাই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় ফেলতে থাকেন। তবে সম্পাদক আর কিছু না  দিলেও তিনি এ ব্যাপারে প্রচুর সাহায্য করায় উৎসাহ বাড়তে থাকে।
 কিন্তু সবচেয়ে দু\খের কথা বহুদিন কাজকরার পর একদিন কার্ডের জন্য সম্পাদকের কাছে গেলে তিনি প্রথমে কার্ড নেই বললেও পরে আলমারী খুলে কার্ড আছে বলে বের করে আবার তিনি রেখে দিলেন এ বলে যে এখনো কার্ড দিব না । আগে  অনেকগুলো বিঞ্জাপন  সংগ্রহ করতে হবে।তারপর কার্ড। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিলে এলাম। পরে কিছু বিঞ্জাপন সংগ্রহ করে আবার গেলে কার্ড দিলেন ঠিকই কিন্তু আরো একটি শর্ত দিলেন এবং প্রতিদিন ১০কপি করে পেপার নিতে হবে। আগাম টাকা দিতে হলো। এভাবে চলতে থাকে আমার সাংবাদিকতা ।
 চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল চোরাচালানীর বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করায় তৎকালীন বিডিআর ও চোরাচালীন গ্র“প হাত  পা ধুয়ে আমার পিছনে লেগে গেল। শুরু হয় জীবনের ঝুকি। মামলা খেতে হলো কয়েকটি। তবে সম্পাদকের প্রচেষ্টায় উদ্ধার হয়েছি। কিন্তু অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। এমনকি কোন কোন েেত্র  দূর্নীতির সংবাদ পরিবেশন করায় আমার কলেজের চাকুরীর েেত্র হস্তপে করে বসল। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা। যেভাবেই হোক আমাকে সাংবাদিক হতে ইহবে। তাই সবকিছুই নিরবে সহ্য করে থাকি। এভাবেই চলে গেলে প্রায় ৭টি বছর ।এর ফাঁকে পরিবার ও সমাজে আমার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। এমনকি দুজন কথিত সাংবাদিককে ম্যানেজ করে কয়েকটি বিওপির কথিত দালাল ও বিখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী যোগসাজজ করে আমার  ও আমার পরিবার, এমনকি মৃতব্যক্তিকেও জড়িয়েও সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতবলে কৌশলে সংবাদপরিবেশন করে  তোলপাড় শুরু করিয়ে দেয়। ফলে আমার পরিবার ুন হয়ে আমাকে নানা ভাবে নাজেহালকরে ফেলল। তারা আমার পরিবারকে এবাবে িেপয়ে তুলল যে  মানুষের পেটে লাথি মারতে শুরু করেছে। এটাা চলতে পারেনা।তারা আমার বিরুদ্ধে  কয়েকটি গ্র“পঠিক করলো  হামলা চালানোর জন্য।   এতকিছুর একমাত্র কারন হলো চোরাচালানীর বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা। যাইহোক শেষ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে প্রশাসন বিভিন্নভাবে তদন্ত করে কিছ ুনা পাওয়ায়  আমি রেহাই পাই। এখানে এ বলে গর্ববোধ করি যে আমি অন্যায় করেনি বলে টিকে আছি।

লেখক: সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক