পদ্মা-মহানন্দা গিলছে জনপদ>ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধের দাবি



‘পদ্মার ভাঙন থামছেই না। গতবছর নদী ভাঙনে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপ-সাইক্লোন কেন্দ্র বিলীন হয়ে গেছে। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ভাঙনের মুখে সরানো হচ্ছে। তীব্র ভাঙনে আর দুয়েক দিনের মধ্যে ইউপি ভবনের জায়গাটিও থাকবে না।’ এই কথা গুলো বলছিলেন পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা দেখছি। এই পদ্মা নদী আগে অনেক দুরে ছিল। ভাঙতে-ভাঙতে পৌঁছে গেছে বাড়ির দরজায়। অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে বছরের পর বছর কাড়িকাড়ি টাকা খচ্চা না করে স্থায়ীভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া হলে আমরা রেহাই পাবো’ 
এদিকে মাসখানেক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদরের নারায়ণপুর- আলাতুলি ইউনিয়ন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর-পাঁকা ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে পদ্মার তীরের মানুষ দিশেহারা। পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার কল্যাণপুর মহল্লায় মহানন্দা নদীতে অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি নদীতে দেবে গেছে। এছাড়া এ নদীর ওইসব মহল্লার মানুষ একই আতঙ্কে দিনপার করছেন। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক ভাঙনে বিলীন হয়েছে সরকারি-বেসরকারিসহ ধর্মীয় স্থাপনা। সবচেয়ে বেশি নদীগর্ভে গেছে কৃষকের ফসলি জমি। বছরের পর বছর আগ্রাসী এই পদ্মার ভাঙনে বদলে গেছে জনপদের মানচিত্র।
 ভাঙন কবলিতরা জানাচ্ছেন, একসময় যেখানে জনবহুল গ্রাম ছিল সেসব এলাকা এখন পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানি থৈ-থৈ করলেও বছরের বাকি সময় ধু-ধু বালুচার। মানুষের এত দুঃখ কষ্টে সময় স্থায়ীভাবে ছিল না সরকারি সাহায্য কিংবা অনুদান। তাই তরা পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর পদ্মায় ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পদ্মা নদীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ভবনের দুই মিটারে মধ্যেই প্রবাহিত হচ্ছে নদী।  বড় বড় হাম্বল দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছে সেই ভবন।
পদ্মা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারি বলেন, ‘সরকারি লোকজন প্রতিবারই শুধু মাপজোক করে, ছবি তুলে, অথচ কাজ কিছুই হয় না। আমরা শুধু দেখি আমাদের গ্রামের কীভাবে একে একে সব হারিয়ে যাচ্ছে।’
উপজেলাটির আলাতুলি ইউনিনের পোলাডাঙ্গার বাসিন্দা মারফত আলী। পৈত্রিক ১২ বিঘা জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শেষ সম্বল রয়েছে একটি ভিটেতে মাটির দেয়ালের বাড়ি। সেটিও পড়েছে হুমকির মুখে। মরফত আলীর মতো পোলাডাঙ্গা সীমান্ত এলাকার ৫ শতাধিক মানুষ আছেন ভাঙন ঝুঁকিতে। 
নারয়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৩, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের শতাধিক ঘরবাড়ি ফসলি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটিও। 

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুরে মহানন্দা নদীর ভাঙনে অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি নদীতে দেবে গেছে। এছাড়া দেবীনগর ইউনিয়নের হড়মা এলাকায় মহানন্দায় ভাঙন চলছে।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম, নূরেসা বেগম জানান, গত ২০ দিন ধরে এই এলাকার বাড়িঘরগুলো নদীতে নেমে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা বসবাস করছি। রাতের অন্ধকারে দেবে গেলে এলাকার বহু হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তারা জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানান। 

এসব পরিস্থিতি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, শিবগঞ্জের মনোহরপুুুর ও আইয়ুবের ঘাট এলাকায় প্রায় দেড় থেকে ২কিলোমিটারজুড়ে পদ্মা নদীর বামতীরে ভাঙন চলছে। জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া সদর উপজেরার পোল্লাডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। 
তিনি আরো বলেন, কল্যাণপুরের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ / নিজস্ব প্রতিবেদক / ১০ আগষ্ট ২০২৫