পদ্মায় আরো ২শ’ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত, পানিবন্দি ৬ হাজার পরিবার
পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পদ্মা পাড়ের প্রায় ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে । নদী পাড়ের বাসিন্দারের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে নানামূখী সঙ্কট। এছাড়াও কয়েকটি শিা প্রতিষ্ঠানের কাসরুমে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ১১ সেন্টিমিটার পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নদীটির বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নতুন করে আরো ২শ’ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর ১ হাজার ৫শ’ ৫৯ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এই তিন উপজেলার প্রায় ৫ হাজার ৩১৫ জন কৃষকের মাসকালাই, রোপা আউশ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনা, আখসহ সবজি নষ্ট হতে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছেÑ ভারতের গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী হয়ে। উজানের ঢলে গত সপ্তাহ ধরে জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিমাঞ্চলের মানুষ পানি বন্দি হয়েছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটছে নদী-তীরবর্তী মানুষের। এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানি বন্দি হওয়ায় তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৬ হাজার ৪০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নে ৪৬২ ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৪৬৩ পরিবার। অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি প্রায় ৫ হাজার ১১৫ পরিবার। এরমধ্যে পাঁকা ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার, উজিরপুর ইউনিয়নে ১৫ পরিবার, দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫০০ পরিবার, মনাকষা ইউনিয়নে ৩৫০ পরিবার।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানান, উজানের ঢলে গত সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১১ সেন্টিমিটার পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মায় পানি বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার। বর্তমানে পদ্মার পানি বিপৎসীমার মাত্র ৮০ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
পদ্মা পাড়ের মানুষরা জানায়, অস্বাভাবিক হারে পদ্মায় পানি বাড়ায় বন্যা আতঙ্কে দিনপার করছে মানুষ। বন্যা হলে আমরা অসহায় জীবনযাপন করি। বন্যার কারণে নদী বিশাল আকার ধারণ করে। এই বিশাল নদী পার হয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুবই দুরহ ব্যাপার হয়ে যায়।
শিবগঞ্জ উপজেলার বোগলাউড়ি এলাকার আব্দুল আওয়াল বলেন, কয়েকদিন থেকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমির সঙ্গে মানুষের বাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। নদীর কাছের গ্রামের বাড়িগুলোয় প্রায় হাটুপানি। এই অবস্থান মানুষ দিন কাটাচ্ছে। এতে মানুষ খুব কষ্টে দিন পার করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ত্রান ও পুনর্বাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আল মনসুর শোয়াইব জানান, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভায় বন্যা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা মোকাবেলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজন বিবেচনায় দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যও মজুত রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা, উজিরপুর, দুর্লভপুর, ছত্রাজিতপুর, ঘোড়াপাখিয়া ও সদর উপজেলার নারায়ণপুর, আলাতুলী, শাহাজাহানপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫শ’ ৫৯ হেক্টর মাসকালাই, রোপা আউশসহ সবজি পানি নিচে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া মাসকালাইয়ের মধ্যে রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টর। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে এই পানি কমে গেলে, কৃষকরা অনেক রিকভারি করতে পারবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৪ সেপ্টম্বর ২০২৪