পদ্মায় ও পুনর্ভবা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এই তিন উপজেলার প্রায় ৪ হাজার ৫৮৫ জন কৃষকের মাসকালাই, রোপা আউশ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনা, আখসহ সবজি নষ্ট হতে বসেছে।
আক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা, বারঘরিয়া ও শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, দুলর্ভপুর, ঘোড়াপাখিয়া,ছত্রাজিতপুর, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ি, আলীনগর ও রহনপুর পৌরসভা।
চরাঞ্চলের কৃষকরা বলেন, গত কয়েকদিন থেকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহহারে। এতে করে নিম্নাঞ্চলের কৃষকের আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে মাসকলাই, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, আখ, চিনাসহ বিভিন্ন ফসল এথন পানির নিচে রয়েছে।
তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেনÑ চাঁইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টও, শিবগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১৫২ হেক্টর ও গোমস্তারপুর উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসলের য়তির আশঙ্কা থাকবে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নারায়ণপুর ইউনিয়নের কৃষক জসীম উদ্দীন বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ২০ বিঘা জমিতে মাসকলাই বীজ বুনেছিলাম। হঠ্যাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সব জমির মাসকালাই ডুবে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে যদি পানি না নামে, তাহলে আমি অনেক তিগ্রস্ত হবো। জমি থেকে পানি না নামলে এলাকায় মাসকলাইয়ের উৎপাদন অনেক হারে কমে যাবে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর দারুল হোদা আলিম মাদ্রাসার কাসরুমে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এই মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে মাদ্রাসার কাসরুমগুলোয় পানি ঢুকেছে। সেজন্য রোববার থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এই মাদ্রসায় প্রায় সাড়ে ৪০০জন শিার্থী রয়েছে।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, হটাৎকরে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমির মাসকালাই ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে। বেশিদামে মাসকালাই বীজ কিনে বপন করে তা ডুবে যাওয়া কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় পাঁকা ইউনিয়নের ২ হাজার ৫শ কৃষক তিগ্রস্ত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী আবু সোয়েব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। এতে করে জেলার নিম্নাঞ্চলের আবাদিজমিগুলো ডুবে গেছে। ধারণা করা যাচ্ছেÑ কয়েকদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে শিবগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর মাসকালাইসহ সবজি পানি নিচে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া মাসকালাইয়ের মধ্যে রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১১০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টর। মাসকালাই ও সবজি মিলিয়ে তিন উপজেলার ৪ হাজার ৫৮৫ জন কৃষক তিগ্রস্ত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে এই পানি কমে গেলে, কৃষকরা অনেক রিকভারি করতে পারবে। তারপরেও আমরা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের সবধরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পরীসংখ্যান অনুযায়ীÑ গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নদীটির বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পাঁকা পয়েন্টে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৭ মিটার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে বিপৎসীমা হচ্ছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৩ সেপ্টম্বও ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় প্রায় ১ হাজার ৪শ' হেক্টর মাসকালাই পানির নিচে