তাপদাহের থাবায় আমের উৎপাদন নিয়ে শংকা



আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবছর মুকুল এসেছিল কম। তার উপর চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে আমের ভাল ফলন নিয়ে শংকায় পড়েছেন আম চাষিরা। প্রচন্ড খরার কারণে আমের স্বাভাকিক গঠন বা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণে। আম বাঁচাতে তাদের পরামর্শ নিয়মিত গাছে গাছে সেচ ও প্রয়োজনীয় পানি স্প্রে করার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বহু বছর আগে থেকে ভাল ফলন হলে পরের বছর কম ফলন হয়। যেটিকে স্থানীয়রা ‘অফ ইয়ার’ এবং ‘অন ইয়ার’ হিসেবে চিনে থাকেন। সে হিসেবে চলতি মৌসুম ‘ অফ ইয়ার’। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছর মৌসুমের শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলার আমের গাছে শতভাগ মুকুল এসেছিল। সেখানে এবছর মুকুল আসে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ। গত বছরের তুলনায় ৩০ ভাগ মুকুল কম নিয়েও কাংখিত উৎপাদনের স্বপ্ন দেখা আম চাষিদের কাছে দুঃস্বপ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে তীব্র তাপদাহ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র খরার কারণে আমের কিছু গুটি ঝরে পড়েছে। তবে, ঝরে পড়ার হার এখনও ব্যাপকভাবে দেখা দেয়নি। খরা আর তাপদাহ আরো দীর্ঘ হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। দীর্ঘ খরায় গাছে আম টিকে থাকাসহ আমের স্বাভাবিক গঠন বা বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা তাড়া করছে তাদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘ এবার আমাদের অঞ্চলে আমের উৎপাদনগত দিক থেকে অফ ইয়ার। এটা প্রাকৃতিকগতভাবে হয়ে আসছে। এটাকে আমাদের মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই তীব্র তাপদাহের কারণে আম ঝরে পড়ার যে বিষয়টি এখনও তীব্র হয়নি। একতো অফ ইয়ারের কারণে আমের ফলন চাষিদের স্বপ্ন পুরণ করেনি। এখন তাপদাহ দীর্ঘ হলে চাষিদর স্বপ্ন আরো মলিন হয়ে যাবে। ফলন কম হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো। এখন প্রকৃতির দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি’।
তিনি বলেন, ‘ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য কৃষি বিভাগ গাছে গাছে সেচ দেয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দু’ ধরণের আমের বাগান রয়েছে। একটি পুরনো জাতের অপরটি নাবি জাতের। নাবি জাতের বাগানগুলোর সিংহভাগই বরেন্দ্র অঞ্চলে। এখন সেখানে সেচ দিয়ে ধান বাঁচাবেন, নাকি আম বাঁচাবেন। আর আমের গাছে সেচের যে খরচ সেটাও অনেক’।
আম চাষি বিপ্লব বলেন, ‘ চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই সময়ে তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে। কিন্তু এবার দেখছি অনেক বেশি। আমরা এবার স্বপ্ন দেখেছিলাম যে টুকু মুকুল এসেছে তা থেকে যা ফলন পাবো তা বিক্রি করে লাভবান হবো। কিন্তু যে আবহাওয়া শুরু হয়েছে তাতে আমার শংকিত হচ্ছি যে আমের সাইজ, কালার ঠিকমত পাব কিনা। সবমিলিয়ে এবারের খরা নিয়ে আমরা শংকিত আছি’।
আম নিয়ে কাজ করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান চাষিদের আশাহত না হয়ে পরিচর্ষা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন,‘ এবার বড় গাছগুলোতে আম কিছুটার কম এসেছিল। ছোট গাছগুলোতে আম বেশি এসেছিল। তারপরেও জেলাজুড়ে যথেষ্ট পরিমাণ আম ছিল। এখন আমের সাইজ, মার্বেল সাইজ অতিক্রম করছে। এমন সময়ে গত এক সপ্তাহধরে তাপমাত্রা অত্যান্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে আমের গুটি ঝরে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে এবং ঝরে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাগানে সেচ দিতে হবে। দশ দিন অন্তর অন্তর সেচ চালিয়ে যেতে হবে যতদিন বৃষ্টি না হচ্ছে’।
যদি লু হাওয়া শুরু হয় তবে, সকালে ও বিকেলে গাছে গাছে শুধু পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেন ড. মোখলেসুর রহমান।
চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলার ৩৭ হাজর ৬০৪ হেক্টর আম বাগান থেকে গত বছরের উৎপাদনের কাছাকাছি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপদনের আশা করে। তবে, উৎপাদনের এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণে চাষিরা তাকিয়ে আছেন প্রকৃতির দিকে, মুশলধারের বৃষ্টির দিকে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ / নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৫ এপ্রিল, ২০২৪