দেড় মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে বন্ধ ইকো টেস্ট
মেশিন থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস ধরে ইকো (ইকোকার্ডিওগ্রাফি) টেস্ট
বন্ধ রয়েছে। এ বিভাগে ইসিজি ছাড়া হৃদরোগীদের অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে হৃদরোগ নির্ণয়ের রোগীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়।
একইভাবে এই বিভাগে ইটিটি টেস্টের কোন মেশিন নেই।
এদিকে হাসপাতাল প্রশাসন বলছেন, এই সঙ্কট নিরসনে খুব শীঘ্রই ইকো টেস্ট চালু করা হবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছে, হৃৎপিণ্ডের রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা করে থাকেন। তার মধ্যে কার্ডিওগ্রাফি হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে বহুলপ্রচলিত একটি পরীক্ষা। আলট্রাসাউন্ডের (অতিশব্দ) মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড পরীক্ষাকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বা ইকো বলে। যা হার্টের প্রকৃত অবস্থা দেখার জন্য ইকো করতে হয়। একজন রোগীর হার্টে কোনো ছিদ্র আছে কি না, ভাল্ব ঠিক আছে কি না, হার্টে পানি জমেছে কি না, শিরা-উপশিরা স্বাভাবিক আছে কি না ইত্যাদি জানতে ইকোর কোনো বিকল্প নেই।
কয়েকজন রোগী জানান, সরকারি হাসপাতালে ইকো করতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হয়। সেটা বাইরের ক্লিনিকে করাতে খরচ পড়ে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি পদে একজন করে দুইজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও পদ দুটি এখন শূন্য। অন্যদিকে কার্ডিওগ্রাফার পদে ৫ জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র একজন। তিনি কর্মচারি হওয়ায় তার মাধ্যম দিয়ে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রটি। ফলে এই দুটি পদে ৭ জনের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে মাত্র একজন
ওই সূত্রে আরও জানায়, ২০১৬ সালে এই হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা হতো। সে সময় আকস্মিকভাবে হৃদরোগ বিশেজ্ঞর পদটি শূন্য হয়। দীর্ঘদিন ইকো পরীক্ষার মেশিনটি ব্যবহৃত না হলে নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পরে রোগিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর জেলা হাসপাতালে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে ইকোকার্ডিওগ্রাফির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। উদ্বোধনের পর নিয়মিতভাবেই নামমাত্র ফি দিয়ে ইকো পরীক্ষা করতেন রোগিরা। এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েকমাস পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল মজিদ অন্য জায়গায় বদলি হয়। ফলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় হৃৎপিণ্ডের রোগ নির্ণয়ের এই পরীক্ষাটি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা আহম্মদুল্লাহ আল মামুন। তার মাকে নিয়ে জেলা হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফির জন্য এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালে ইকো পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তিনি আবার ঘুরে গেছেন। আহম্মদুল্লাহ বলেন, খবর নিয়ে জানতে পারলাম হাসপাতালে এখন ইকো পরীক্ষা করা হয়না। অনেক দিন ধরে রোগিরা এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বাহিরে মায়ের ইকো পরীক্ষা করানো হয়েছে। এরকমর রোগিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের। এতে ওই রোগির শারিরীক অবস্থা আরও নাজেহাল হয়ে পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জমান বলেন, জেলা হাসপাতালের যারা দায়িত্বে রয়েছে তাদের উচিত শিগগির বিষয়টি মাথায় নিয়ে এই সঙ্কটের নিরসন করা। এতে সাধারণ মানুষ কম টাকায় জেলা হাসপাতালেই ইকো পরীক্ষা করাত পারবেন। নতুবা তাদের অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে।
প্রায় দেড় মাস ধরে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বন্ধ রয়েছে জানিয়েছেন ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, এখানে একজন কার্ডিওলজি ইকো পরীক্ষা করতেন। তিনি পদ্নোনতি পেয়ে অন্য জায়গায় বদলি হয়েছেন। এই সঙ্কট নিরসনের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই বিষয়টি অবগত করেছি। মন্ত্রণালয় যখন এখানে লোকবল দিবেন, আবারও ইকো পরীক্ষা চালু হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ / নিজস্ব প্রতিবেদক / ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪