২০ টাকার কালাই রুটিতে জীবন চলে মর্জিনার


চরম অভাব অনটনের মাঝে মানুষের দারে দারে ঘুরে হাত না পেতে আত্মসম্মান নিয়ে কালাই রুটি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব মর্জিনা বেগম। ২০ টাকার কালাই রুটিতে চলছে তার সংসার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশের বট গাছের নিচে ২০ বছরের জীবন সংগ্রামে কষ্ট থাকলেও খুশি মর্জিনা। নানান বর্ণের, নানান শ্রেণীর ক্রেতাদের মধ্যে তাকে কেউ ডাকেন খালা, আবার কেউ ডাকেন নানী। ক্রেতাদের প্রিয় মর্জিনা খালা কিংবা মর্জিনা নানীর হাতের কালাই রুটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন এলাকাজুড়ে।
কালাই রুটি বিক্রেতা সংগ্রামী মর্জিনা বেগম চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলবাগান বস্তির বাসিন্দা।
সোমবার রাতে  চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বট গাছ তলায় স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় একটি চেরাগ জ্বলছে। পাশে বসে মাটির চুলায় কালাই রুটি তৈরী করছে মর্জিনা। পাশে দুটো বেঞ্চে বসে ছিল কয়েকজন ঝাল প্রেমি মানুষ। মানুষগুলোও বেশ মচমচ করে খাচ্ছিল কালাইয়ের রুটি আর লবণ ও মরিচ বাটার ঝাল।
২০ বছর আগে স্বামী হারানো মর্জিনা খাতুন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। যে কোন সময় রাতের বেলা চাল ছাড়া খোলা আকাশের নিচে কালাই রুটি বিক্রি করে আসছেন। বট গাছের নিচে রুটি বানানোর কারণ জানতে চাইলে মর্জিনা খালা বলেন, স্বামী তোসলিম হোসেনকে হারানোর পর আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিলাম। বাড়িতে কামাই করার মতোন আর কেউ নাই। তখন রাতে রুটি বানাই। আর বিক্রি করি। এখান থেকে যা টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়েই সংসার চালাই।
বাড়িতে ছেলে মেয়ে আছে কিনা জানতে চাইলে মর্জিনা খালা প্রশ্নোত্তরে বলেন,  দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে আমার। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুশুর বাড়িতে থাকে। আর দুটা ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সালেক প্রতিবন্ধী। আর ছোট ছেলে রাজু বেকার বললেই চলে। আমার ছোট ছেলেটা কখন রিক্সা চালায়, কখনও বারো ভাজা, বাদাম বিক্রি করে। কিন্তু তার এখন আর বেচা বিক্রি নাই। সব মিলিয়ে আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ছোট ছেলে ব্যবসার জন্য কিস্তি তুলেছিলো। ওর এখন বেচা বিক্রি না থাকায় রুটি বেচেই তার কিস্তির টাকা শোধ করি।
মর্জিনা খালা আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ফুটপাতে দুটা রুটি বেচেই খাই। যেখানে এখন বাস করছি জামিটা রেলের। হয়তো সেখানকার বাড়িগুলো রেলের লোকজন উঠিয়ে দিবে। কিন্তু থাকার জায়গা তো নাই। কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো। এ ভেবেই দিন পার করছি। আশপাশে কোন সরকারি ঘর পেলে সেখানে উঠবো। আর এখানে এসে রুটি বিক্রি করবো। তাহলে সংসারটা চালাতে পারবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা সুমন। তিনি একটি রুটি খেয়ে খালাকে আরেকটি রুটির অর্ডার দেন। খালার বানানো রুটি খেতে কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসর পেলেই এখানে রুটি খেতে আসি। রুটির দাম ২০ টাকা হলেও স্বাদটা অনেক। বিশেষ করে লবণ আর মরিচ বেটে তিনি যে ঝালটা বানান তা কিন্তু বেশ স্বাদের।

ওহেদুজ্জামান নামের একজন জানান, জেলা শহরের মধ্যে সব জায়গার কালাইয়ের রুটির স্বাদ নেয়া আছে। কিন্তু মর্জিনা খালার বানানো রুটি আর ঝাল বেশ মজাদার। তিনি রাতে রুটি বানান। সারাদিন কাজ শেষ করে প্রায় সময় এখানে চলে আসি রুটি আর ঝাল খেতে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৮ মার্চ, ২০২২