চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি গাছে মিলবে ২০০ জাতের আম!

বাড়িতে কিংবা বাগানে শখের বসে বা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আম পেতে অনেকেই একটি গাছে একাধিক জাতের কলম করতে দেখা যায়। এবার একাধিক নয়, একটি গাছে ২০০ জাতের আম! এমনই এক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত  চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসে ঢুকতেই মূল ফটক পেরিয়ে বাম দিকেই এই গাছ। কয়েকমাস আগে বিশাল বড় আমগাছকে কেটে ছোট করা হয়েছে। সেখান থেকে বের হওয়া নতুন কচি ডালে করা হয়েছে দুইশ জাতের কলম। ইতোমধ্যে গ্রাফটিং বা কলম থেকেও বের হয়েছে হরেকরকম জাতের ডালপালা।
এদিকে আম বিজ্ঞানীরা বলেন, এতে জটিল কোন সমীকরণ নেই। একটি গাছে যতধরনের কলম করা হবে, ঠিক ততো ধরনের বা জাতের আম ধরবে। তবে আগামী মৌসুম থেকেই আমের ফলন আসবে বলে আম বিজ্ঞানীদের দাবি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, কয়েক দশকের পরিত্যক্ত একটি বড় ও পুরাতন গাছে দুইশ জাতের আমের বিশাল সংগ্রহশালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্র, মনামিনা কৃষি খামার ও বিভিন্ন কৃষকদের থেকে সায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে এই দুইশ জাতের। এই উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন প্রায় সবগুলো আমের সংগ্রহশালা তৈরি হবে, তেমনি অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পর্যটন খাতেও ভূমিকা রাখবে। ফলন আসলে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকেও রেকর্ড করবে এই আমগাছ বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র আরো জানায়, প্রচলিত বা পরিচিত জাতগুলো ছাড়াও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম দেয়া প্রায় একশ জাতের আম থাকবে এই গাছে। তারমধ্যে অন্যতম হলো- ফজলি, বোম্বাই ফজলি, সুরমা ফজলি, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, লখনা, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, রাণী পছন্দ, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙ্গা, বারি আম-২, বারি-৩, মোহনভোগ, ক্ষিরমন, দুধস্বর,গৌড়মতি, সুন্দরী, সুবর্ণরেখা, কালাপাহাড়, বউ ভুলানী, জমরুদ, অরুনা, চৌষা, রাজভোগ, কোহিতুর, বিলু পছন্দ, কাগরী, চিনিবাসা, দুধকুমার, সীতাভোগ, শোভা পছন্দ, লতিকা, রহনপুরি, হরমতি, ইলামতি, রানিভোগ, দিলখোস, তরুলতা, জৈষ্ঠ্যিভোগ, লাবন্য, চাঁপাই সুন্দরী, কুমড়াজালি,কলমিলতা,বালাকা, মনময়ূরী, সিমকি, মধুমতি, মমতাজ, ফুলকিসহ প্রায় দুইশ জাত। 


চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী প্রায় ২০টি দুর্লভ জাতের সায়ন দিয়েছেন এই গাছে গ্রাফটিং করার জন্য। তিনি বলেন, একটি গাছে দুইশ জাতের আম হবে কি না, এটা নিয়ে জটিল কোন সমীকরণ নেই। কারন একটি গাছে যতগুলো গ্রাফটিং করা হবে, ততো জাতের আম ধরবে৷ সায়ন সংগ্রহ করে সঠিক উপায়ে গ্রাফটিং বা কলম করার বিষয়টিই এখানে মুখ্য। তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগের ফলে অনেকগুলো জাতের জামপ্লাজম একটি গাছে সংগ্রহীত থাকবে। আম গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদামতো খুব সহজেই সংগ্রহ ও গবেষণা করতে পারবে। তবে এধরনের উদ্যোগের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসের মালি মোজাম্মেল হোসেন ও নিরাপত্তাকর্মী নাসিম আল আরাফাত জানান, গাছটিতে গুটি জাতের আম ধরতো। খেতেও তেমন ভালো ছিল না। তাই জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ স্যার আম গবেষকদের ডেকে এখানে দুইশ জাতের কলম করেছেন। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। কারন সার্কিট হাউসে বাইরে থেকে অনেক ভিআইপি লোকজন আসে। এখন থেকে তারা এখানে আসলে গাছটি দেখে মুগ্ধ হবে এবং সারাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, জেলার আমের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে এমন উদ্যোগ। দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে জেলার আমভিত্তিক পর্যটন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্য একটি গাছে ২০০ জাতের আম অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে জানান তিনি।
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ মুঠোফোনে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১০০টি জাতের নামকরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রচলিত জাতগুলো ছাড়াও এসব নতুন নাম দেয়া জাতের আম সংগ্রহে রাখাও এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। পৃথিবীর কোথাও এমন নেই যে, একটি গাছে এতগুলো জাতের আম রয়েছে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর্যটনকে আকর্ষণ করবে। এতে জেলার পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৭ জানুয়ারি, ২০২২