চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী ঝামেলায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর গ্রেফতার ভয়ে রয়েছে গ্রামবাসী। বৃদ্ধ, নারী ও শিশু বাদে ঘর ছেড়েছেন পুরুষরা। এমনকি ঘটনার পরদিন সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামের মোড়ের সকল দোকানপাট বন্ধ ছিল। মোড় সংলগ্ন এলাকার বাড়িগুলোতে ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই নেই পুরুষ সদস্যরা।
গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম থেকে দূরে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে পুরুষ সদস্যরা। জরুরি দরকার না হলে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না নারী সদস্যরাও। হোসেনডাঙ্গা গ্রামের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লোকজনেরও উপস্থিতি তেমন নেই।
স্থানীয় নারী ও বৃদ্ধরা বলছেন, পুলিশের উপর হামলার পর থেকেই পুলিশ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। এসময় তারা কয়েকজন নিরপরাধ মানুষকেও আটক করেছে। এ থেকেই আতঙ্ক বেড়েছে সবার মনে। তাই গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে গ্রামের পুরুষরা। তবে হোসেনডাঙ্গা মোড়ের এমন অবস্থা হলেও কিছুটা ভিন্ন চিত্র একই গ্রামের শেষ মাথায়।
নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার সময় প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিল ষাটোর্ধ আলহাজ্ব এমরান আলীর বাড়িতে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনার একজন প্রত্যদর্শী তিনি। তিনি বলেন, তারা (হামলাকারীরা) পুলিশের উপর ব্যাপক মারধর করেছে। রক্তাক্ত অবস্থায় জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেই আমাদের বাড়িতে।
তিনি আরও বলেন, যারা পুলিশকে মেরেছে তারা কোথায় আছে জানি না। কিন্তু এখন আমরা এর ভুক্তভোগী। ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাই না করেই পুলিশ গ্রেফতার করছে। তাই এলাকায় কেউ থাকছে না। আমাদের মতো বয়স্ক শুধু কয়েকজন লোক এলাকায় আছে।
প্রত্যদর্শীরা জানায়, পুলিশ প্রথম বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলেও শেষ রা হয়নি। নিচ থেকে হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকলে পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেয় ৪ জন পুলিশ সদস্য। আশ্রয় নেয়া বাড়ির মালিক রবিউল ইসলামের স্ত্রী নিলুফা আক্তার পিংকি বলেন, হঠাৎ দেখি ছাদ দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে রক্তাক্ত ৪ পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে একজনের কপাল থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছিলো। তিনি আরও জানান, এক পুলিশ সদস্যদের প্যান্ট ছিঁড়ে গেছিল। পরে আমি একটি গামছা দিয়ে তার ইজ্জত রা করি। পুলিশ সদস্যদেরকে ঘরের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলাম। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ঘর থেকে বের করি। গৃহবধূ নিলুফার বাড়ির ছাদে প্রচুর ইটপাটকেল ও ঘরে রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়।
একই এলাকার মোনাজাত আলীর স্ত্রী সাহনাজ খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আমার স্বামী নেই। আর কতোদিন এভাবে পালিয়ে থাকবে আল্লাহই ভালো জানেন। এসব ভোট বা ঝামেলার মধ্যে আমরা নাই। কিন্তু পুলিশ ঘটনার পর যাকে তাকে ধরছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভয়ের মধ্যে দিন পার করছি।
শুক্রবার (০৭ জানুয়ারী) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় পুলিশের প থেকে ৩৮৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সদর থানার এসআই ওসমান আলী বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনানমা আরো ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামীদেরকে আটক করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
ওসি আরো বলেন, গত বুধবার (০৫ জানুয়ারী) অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন শরিয়ত আলী। তার কাছে পরাজিত হন বর্তমান ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, আব্দুল কুদ্দুস সেরাতাল। কিন্তু পরাজয় মেনে নিতে না পেরে পরাজিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনি ও আব্দুল কুদ্দুস সেরাতাল এক হয়ে তাদের শতাধিক সমর্থকসহ লাঠিসোটা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে শরিয়ত আলীর বাড়িতে হামলা চালাতে যায়। এতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তারা ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৯ জানুয়ারি, ২০২২
হোসেনডাঙ্গায় গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য