চায়ের দোকানে দিনরাত কাটানো রাহেলা পাচ্ছেন নতুন বাড়ি

নাম তাঁর রাহেলা বেগম। জীবনের ৫৫টি বছর পার করে এখন বার্ধক্যের কাছে এসে তাঁর দিন ও রাত, দু’টোই কাটে ‘চায়ের দোকানে’। জীবনযুদ্ধে দুর্বিসহ সময় কাটানো রাহেলা বেগমের অবশেষে মাথা গোঁজার যায়গা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ হিসেবে তাঁকে সরকারি খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রেল কলোনী এলাকায় একসময় বসবাস করা রাহেলা বেগমের স্বামী মারা গেছেন ২২ বছর আগে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে। তবে, ঘরে  প্রতিবন্ধি দু’ সন্তান। সহায়-সম্বলহীন রাহেলার দু’ দশক ধরে মানবেতর জীবন যাপন। ঘর নেই, বাড়ি নেই, নেই মাথা গোঁজর ঠাই টুকুও। প্রতিবন্ধি দু’ সন্তানকে কানসাটে রেখে জীবিকার তারণায় রাহেলা প্রায় ১ যুগ আগে চলে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের স্বরূপনগরস্থ জেলখালা মোড়ের একটি চায়ের দোকানে। সেই দোকানে টুকিটাকি কাজ করে তা থেকে যে সামন্য টাকা পান তাই দিয়ে চলে রাহেলার জীবন। দিনভর চায়ের দোকানে কাজ আর রাতের বেলায় সেই চায়ের দোকানেই ঘুমানো। ঝড়, বৃষ্টি কিংবা শৈত্যপ্রবাহ সময় যেটাই হোক এইভাবে কাটছিল রাহেলার ‘দিনরাত্রি’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জাহাঙ্গীর আলম নামের এক সরকারি চাকুরিজীবির নজরে আসেন রাহেলা বেগম। জাহাঙ্গীর তার ফেসবুক ওয়ালে তুলে ধরেন রাহেলার দুঃখগাঁথা। শুধু তাই নয়, রাহেলার জন্য কিছু করার উদ্যোগ নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফ জামান আনন্দকে অনুরোধ করেন। আনন্দ চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হককে বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে রাহেলাকে ডেকে আনেন তাঁর কার্যালয়ে। শোনেন রাহেলার জীবন কাহিনী। ওই সময় জেলা প্রশাসক দু’ খালা শাড়ি, অন্যান্য পোশাক ও স্যান্ডেল কিনে দেন জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক। আর আশ্বাস দেন, রাহেলা যাতে তার সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে পারে সে লক্ষে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি খাস জমিতে ঘর করে দেয়ার। এটি তাঁকে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবেন্দ্র নাথ ওরাঁও, চাঁপাইনবাববগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সরকার, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফ জামান আনন্দ।
নতুন বাড়ি পাবার কথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠেন রাহেলা বেগম। তিনি বলেন, ‘ নতুন বাড়ি পাওয়া হামার কাছে স্বপ্নের মতন ব্যাপার। ছ্যালাপিল্যা লিয়্যা নতুন বাড়িতে থাকতে পাবো ভাবতেই পারিনি। হামি বেজাই খুশি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীকে, জেলা প্রশাসককে এবং যাঁরা হামার কথা তুল্যা ধর‌্যাছেন তাদেরকে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ ঘটনাটি শোনার পর খুবই কষ্ট লেগেছে। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবেনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষনার আলোকে তাঁকে (রাহেলা বেগমকে) প্রধানমন্ত্রী উপহার স্বরূপ একটি বাড়ি বানিয়ে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শীগ্রই তিনি নতুন বাড়িতে উঠবেন’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০১-০৭-২০