ভারতীয় গরু না আসায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিদের লাভের স্বপ্ন করোনায় ম্লান
উত্তরের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরাবানীর ঈদ মানেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসার হিড়িক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন চিত্র থাকলেও এবছরের চিত্রটা ভিন্ন। ভারতীয় গরু না আসায় এবছর ভাল লাভের আশা করেছিলেন গরু খামারিরা। করোনার থাবায় ঈদুল আযহার সময় ঘনিয়ে আসলেও ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার ব্যাপারিরা আসছেননা চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিদের খামারে। ফলে লাভের আশায় গরু, ছাগল লালন পালন করা ব্যাপক পরিমাণ খামারি লোকসানের মুখে পড়ছেন।
৫ উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শুধুমাত্র নাচোল উপজেলা ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা ভারতীয় সীমান্ত ঘেসে অবস্থিত। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে প্রতিবছরই চার উপজেলার বিস্তৃণ সীমান্ত গলিয়ে প্রচুর পরিমাণ গরু আসতো। চোরাই পথে ভারত থেকে আসা গরুগুলোকে ‘বৈধতা’ দিতে গত বছরেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চালু ছিল বিট/খাটাল। ভারত থেকে গরু আনাকে ঘিরে সীমান্তে ঘটতো সীমান্তে ‘রাখাল’ হত্যার মত অনাকাংখিত ঘটনাও। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তগ্রামগুলোতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ দেশী গরু।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তগ্রামসহ জেলার অন্যান্য এলাকায় এবারের কোরবানী ঈদে প্রচুর পরিমাণ কোরাবানী যোগ্য পশু রয়েছে। জেলায় এবছর বাণিজ্যিকভাবে লালন পালন করা কোরবানী পশুর সংখ্যা হচ্ছে ৯৮ হাজার ৭৬৯টি। আর জেলায় চাহিদার পরিমাণ হচ্ছে, ৭৯ হাজার ৪৫০টি। সেহিসেবে, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার বেশি পশু রয়েছে খামারি ও গৃহস্থের ঘরে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের বটতলা হাট, রামচন্দ্রপুর হাট, শিবগঞ্জ উপজেলার তর্তিপুর ও মনকষা হাট, নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডি হাটসহ প্রধান হাটগুলো দখলে আছে দেশি গরু ও ছাগলে। তবে, হাটগুলোয় প্রচুর পরিমাণ গরু ছাগল নামলেও ক্রেতার পরিমাণ অনেক কম। গরু বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা কমের কারণে তারা নায্য দাম পাচ্ছেননা।
বটতলা হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ এবারের হাটের অবস্থা খুবই খারাপ। বাইরের পার্টি (ব্যাপারি) আসেনা। যার কারণে হাটে গরু আমদানীও কম। বাইরের পার্টি না আসায় প্রতিটি গরুতেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে’। একই হাটের গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ‘ এবার ভারতীয় গরু নাই। আমরা দেশি গরু লালন পালন করেছি। ভারতীয় না থাকায় লাভ হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু গরু ব্যাপারি নাই। যারা হাটে আসছেন তারা ১ লাখ টাকার গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম দিতে চাচ্ছেন। গরু প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা করে কম বলছে ক্রেতারা। বেশি দামে গো-খাদ্য কিনে গরু লালন পালন করে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। লাভতো দূরের কথা লসের মুখে পড়েছি আমরা’।
তবে হাটগুলোর সাধারাণ ক্রেতারা বলছেন এবার দাম রয়েছে সহনীয় মাত্রায়। এ বছর মন হিসেবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা মন হিসেবে দরের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছে, ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি হলেও বড় গরু পাওয়া যাচ্ছে সহনীয় দামেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে পশু খামারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার। এ খামারগুলোতে কোরাবানীকে সামনে রেখে পশু লালন পালন করা খামারিরা বলছেন, করোনার প্রভাবে দেশের অনেকগুলো বড় বড় গরু হাট বন্ধ হয়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যাচ্ছেনা কোরবানীর পশু। তাই লাভের স্বপ্ন দেখা খামীরা এবার লোকসানের শংকা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোশংকবাটি এলাকার গরু খামারি শরিফা খাতুন বেবি বলেন, ‘ ৫ বছর ধরে খামারে গরু লালন পালন করছি। গেল বছর গুলোতে লাভে মুখ দেখেছিলাম। এবার খামারের বড় বড় ১৬টা গরু এখন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোরবানী ঈদ চলে আসছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসে কারণে ঢাকার কোন ব্যাপারির খবর নাই। স্থানীয়ভাবে গরু বিক্রি করে তো লাভ আসবেনা’। তিনি বলেন, ‘ আমার মত অনেক খামারিই এবার পুজি সংকটে পড়বে। আমরা এখন সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি’।
করোনা ভাইরাসের কারণে গরু খামারিদের গরু বেচা-কেনায় সহায়তা করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা সাফল্যের মূখ দেখেনি। করোনার কারণে পশুহাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ খামারিদের সহায়তা করতে অললাইনে গরু ছাগল কেনা-বেচার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতে আশানরূপ সাড়া মিলেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণী সম্পদক কর্মকর্তা, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরী করা অন লাইন পশুহাটে অনেক খামারি ও গরু ব্যবসায়ী কয়েক এ্যাংগেলে গরু ছাগলের ছবি পোস্ট দিয়ে তার সম্ভাব্য দাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। কিন্তু কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এতে তেমন সাড়া মিলেনি। তবে আমরা আশাহত নয়, যেহেতু এটি একটি নতুন জিনিস মানুষের কাছে তা প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগবে।
তিনি, গরু কেনা-বেচায় করোনার বিরূপ প্রভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানীর পশুর সংকট হবেনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ জেলায় এমনিতেই চাহিদার তুলানায় গরু ছাগলে পরিমাণ বেশি রয়েছে। তাছাড়া আমরা মনে করছি, করোনার কারণে এবার মানুষ হয়তো কিছুটা কম গরু ছাগল কোরবানী দিবেন। ফলে গরু ছাগল নিয়ে কোন সংকট হবেনা। বরং উদ্বৃত্তই থাকবে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৬-০৭-২০
৫ উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শুধুমাত্র নাচোল উপজেলা ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা ভারতীয় সীমান্ত ঘেসে অবস্থিত। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে প্রতিবছরই চার উপজেলার বিস্তৃণ সীমান্ত গলিয়ে প্রচুর পরিমাণ গরু আসতো। চোরাই পথে ভারত থেকে আসা গরুগুলোকে ‘বৈধতা’ দিতে গত বছরেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চালু ছিল বিট/খাটাল। ভারত থেকে গরু আনাকে ঘিরে সীমান্তে ঘটতো সীমান্তে ‘রাখাল’ হত্যার মত অনাকাংখিত ঘটনাও। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তগ্রামগুলোতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ দেশী গরু।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তগ্রামসহ জেলার অন্যান্য এলাকায় এবারের কোরবানী ঈদে প্রচুর পরিমাণ কোরাবানী যোগ্য পশু রয়েছে। জেলায় এবছর বাণিজ্যিকভাবে লালন পালন করা কোরবানী পশুর সংখ্যা হচ্ছে ৯৮ হাজার ৭৬৯টি। আর জেলায় চাহিদার পরিমাণ হচ্ছে, ৭৯ হাজার ৪৫০টি। সেহিসেবে, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার বেশি পশু রয়েছে খামারি ও গৃহস্থের ঘরে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের বটতলা হাট, রামচন্দ্রপুর হাট, শিবগঞ্জ উপজেলার তর্তিপুর ও মনকষা হাট, নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডি হাটসহ প্রধান হাটগুলো দখলে আছে দেশি গরু ও ছাগলে। তবে, হাটগুলোয় প্রচুর পরিমাণ গরু ছাগল নামলেও ক্রেতার পরিমাণ অনেক কম। গরু বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা কমের কারণে তারা নায্য দাম পাচ্ছেননা।
বটতলা হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ এবারের হাটের অবস্থা খুবই খারাপ। বাইরের পার্টি (ব্যাপারি) আসেনা। যার কারণে হাটে গরু আমদানীও কম। বাইরের পার্টি না আসায় প্রতিটি গরুতেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে’। একই হাটের গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ‘ এবার ভারতীয় গরু নাই। আমরা দেশি গরু লালন পালন করেছি। ভারতীয় না থাকায় লাভ হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু গরু ব্যাপারি নাই। যারা হাটে আসছেন তারা ১ লাখ টাকার গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম দিতে চাচ্ছেন। গরু প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা করে কম বলছে ক্রেতারা। বেশি দামে গো-খাদ্য কিনে গরু লালন পালন করে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। লাভতো দূরের কথা লসের মুখে পড়েছি আমরা’।
তবে হাটগুলোর সাধারাণ ক্রেতারা বলছেন এবার দাম রয়েছে সহনীয় মাত্রায়। এ বছর মন হিসেবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা মন হিসেবে দরের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছে, ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি হলেও বড় গরু পাওয়া যাচ্ছে সহনীয় দামেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে পশু খামারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার। এ খামারগুলোতে কোরাবানীকে সামনে রেখে পশু লালন পালন করা খামারিরা বলছেন, করোনার প্রভাবে দেশের অনেকগুলো বড় বড় গরু হাট বন্ধ হয়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যাচ্ছেনা কোরবানীর পশু। তাই লাভের স্বপ্ন দেখা খামীরা এবার লোকসানের শংকা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোশংকবাটি এলাকার গরু খামারি শরিফা খাতুন বেবি বলেন, ‘ ৫ বছর ধরে খামারে গরু লালন পালন করছি। গেল বছর গুলোতে লাভে মুখ দেখেছিলাম। এবার খামারের বড় বড় ১৬টা গরু এখন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোরবানী ঈদ চলে আসছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসে কারণে ঢাকার কোন ব্যাপারির খবর নাই। স্থানীয়ভাবে গরু বিক্রি করে তো লাভ আসবেনা’। তিনি বলেন, ‘ আমার মত অনেক খামারিই এবার পুজি সংকটে পড়বে। আমরা এখন সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি’।
করোনা ভাইরাসের কারণে গরু খামারিদের গরু বেচা-কেনায় সহায়তা করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা সাফল্যের মূখ দেখেনি। করোনার কারণে পশুহাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ খামারিদের সহায়তা করতে অললাইনে গরু ছাগল কেনা-বেচার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতে আশানরূপ সাড়া মিলেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণী সম্পদক কর্মকর্তা, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরী করা অন লাইন পশুহাটে অনেক খামারি ও গরু ব্যবসায়ী কয়েক এ্যাংগেলে গরু ছাগলের ছবি পোস্ট দিয়ে তার সম্ভাব্য দাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। কিন্তু কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এতে তেমন সাড়া মিলেনি। তবে আমরা আশাহত নয়, যেহেতু এটি একটি নতুন জিনিস মানুষের কাছে তা প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগবে।
তিনি, গরু কেনা-বেচায় করোনার বিরূপ প্রভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানীর পশুর সংকট হবেনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ জেলায় এমনিতেই চাহিদার তুলানায় গরু ছাগলে পরিমাণ বেশি রয়েছে। তাছাড়া আমরা মনে করছি, করোনার কারণে এবার মানুষ হয়তো কিছুটা কম গরু ছাগল কোরবানী দিবেন। ফলে গরু ছাগল নিয়ে কোন সংকট হবেনা। বরং উদ্বৃত্তই থাকবে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৬-০৭-২০