আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে করোনা সন্দেহে ঝুপড়ি ঘরে স্বাস্থ্যকর্মীর অমানবিক বাস > অবশেষে মুক্তি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্দেশে নির্জন পুকুরপাড়ের ঝুপড়ি ঘরে ‘কোয়ারেন্টিনে’ রাখা এক নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে (২১) সাতদিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার দুপুরে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁদের বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তাদের ঘরের পাশে একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে তাঁকে রেখেছে। এ ছাড়া পুলিশ ওই ঝুপড়িঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

ওই স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসকের অ্যাটেনডেন্ট পদে চাকরি করেন। করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। গত ২১ এপ্রিল ওই স্বাস্থ্যকর্মী কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লখণ্ডা গ্রামের  বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী তাঁকে একটি নির্জনস্থানে পুকুরপাড়ে তালপাতা দিয়ে কোনোমতে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর কোটালীপাড়া  উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

ওই স্বাস্থ্যকর্মী জানান, তিনি ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসাপাতাল বন্ধ করে তাঁকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী এই তাঁর বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জনস্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তাঁকে কোয়ারেন্টিনে রাখে।

স্বাস্থ্যকর্মী আরো বলেন, ‘আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করেছি। খুব কষ্ট হয়েছে। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না। সাতদিন পর আজ পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাঁর আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি। তাঁকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছিল। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েকে এখানে রেখেছিল। আমি ওই আওয়ামী লীগ নেতার শাস্তি চাই।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তেই ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে। আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। এখন অপরাধ হলে সবার হবে। এখানে আমার একার দায় নেই।’

যোগাযোগ করা হলে কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঝুপড়ি ঘর থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাদের ঘরের পাশে নতুন একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঝুপড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিকেলে আমি ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁকে আমরা কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তাঁর কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি। তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর পাঠানো হবে। ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা অমানবিকভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সূত্রঃ এনটিভি অনলাইন/ ২৭-০৪-২০

,