‘বিরল’ রোগে আক্রান্ত নাচোলের শিশু মুনিরার যন্ত্রণাময় জীবন
চাঁপাইবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক মাসুদুজ্জামান মামুনের শিশু কন্যা তাসফিয়া জাহান মুনিরা যন্ত্রণাময় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ জীবন পার করছেন। ফুলের মতই কোমলমতি সদা হাস্যোজ্জ্বল মুনিরা যন্ত্রণার কথাও বলে হাসি মুখে, ‘ব্যাথা করে, চুলকায়’। জন্মের মাত্র তিন দিনের মাথায় দেখা দেয়া বিরল রোগের যন্ত্রণা নিয়ে মুনিরা এগিয়ে যাচ্ছে অজানা ভাবিষ্যতের দিকে। অথচ অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেনা তার দরিদ্র পরিবার।
উত্তরের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনাববগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের নাচোল উপজেলা পরিষদের ‘গা ঘেষে’ থাকা গোডাউনপাড়ার মাত্র চার বছর তিন মাস বয়সী তাসফিয়া জাহান মুনিরা এলাকার আর ৫টা শিশুর মতই চলাফেরা করে। অন্য শিশুদের মতো সেও পাড়াজুড়ে ঘুরে বেড়ায়, সমবয়সীদের সঙ্গে নাচ করে, গান করে। জামাপড়া অবস্থায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে সে আর অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক নয়, শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রণাময় বিরল একরোগ।
মুনিরার মা তানজিলা খাতুন বলেন, ‘ জন্মের পরপরই তেমন কিছু বোঝা না গেলেও মাত্র তিন দিনের মাথায় শিশুটির পিটের দিকে চামড়ায় চিড় ধরেছিল ফেঠে গেছিল। ফাটার পরে চর্বির মত একধরণের মাড়ের মতন আঠালো রস বের হতো। রসটা খুব গন্ধ করতো। ওই অবস্থায় ছয় দিনের শিশুকে নিয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসা করার পর আরাম হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর দেখা দেয় এবং পিটের দিকে টিউমার সাদৃশ্য একটি অংশের সৃষ্টি হয়। কালচে বর্ণের ওই টিউমার সাদৃশ্য অংশে লোম বের হওয়া শুরু হয় যা পর্যায়ক্রমের ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শরীরজুড়ে’।
তানজিলা বলেন, ‘ দিনের বেলায় মুনিরা খেলে বেড়ার কারণে হয়তো যন্ত্রণা বুঝতে পারেনা। কিন্তু রাত নামলেই যন্ত্রণায় ছটফট করে। হাত দিলে দেখি শিশার মত তাপ বের হয়। তখন পানি দিয়ে ধুয়ে দিই। রাতে না ঘুমিয়ে সারারাত বাতাস করি তাতে যদি ওর যন্ত্রণা কমে’।
দিনে দিনে মুনিরার বয়স বাড়ছে। এখন সে তার মাকে প্রশ্ন করে, ‘ মা, আমার শরীরে এগুলো কি বের হচ্ছে’।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা তানজিলা বলেন, ‘ সন্তানে এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারিনা। বলি, আল্লাহ দিয়েছে আল্লাহই ভাল করে দিবে’।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান মুনিরার পিতা মাসুদুজ্জামান মামুন জানান, প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার করা হয়েছিল। পরে তারা খরচ হবে অনেক উল্লেখ করে ঢাকা নিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন লাখ দেড়েক টাকা খরচের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু টাকা অভাবে ওই চিকিৎসা করাতে পারেন নি তারা। স্থানীয়ভাবে হোমিও চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটির শরীরের লোমশ অংশ মাথার ঘাড় থেকে পায়ের দিয়েও ছড়িয়ে পড়ছে। আবার টিউমার সাদৃশ্য অংশটাও বড় হচ্ছে। এনিয়ে আতংক তাড়া করছে পরিবারকে।
মাসুদুজ্জামান মামুন সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘ আমার কোন বোন নেই তাই আল্লাহ’র কাছে কন্যা সন্তানই চেয়েছিলাম। দু’টি কন্যা সন্তান। তাদের নিয়েই সুখস্বপ্ন দেখতাম। ছোটটির কারণে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। আমি কিছু চাইনা, আমি যেন আমার মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারি সে সহযোগিতাটাই যেন সবাই করেন’।
প্রতিবেশি আবু সাঈদসহ অন্যান্যরা জানালেন, শিশুটির ভবিষৎ পরিণতির কথা ভেবে এলাকার সব মানুষেরই খুবই খারাপ লাগে। গরীব পরিবার হওয়ার কারণে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেনা। শিশুটি অন্ধাকারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যান্ত অঞ্চল নাচোলের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুলতানা পাপিয়া বলেন, ‘শিশুটিকে দেখেছি। এটি একটি রেয়ার কেস। দেড় বছর আগে বাংলাদেশে যে ডায়গনিস্ট করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে এটার একটা সিস্ট আছে। শিরো সিস্ট থেকে স্প্রেড করছে। বিরল এই রোগের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বিশেষায়িত হাসপাতালে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সেই ব্যবস্থা নেব’।
বিরল রোগে আক্রান্ত মুনিরার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন। নাচোল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু বলেন, ‘বিষয়টা আমরা আগে জানতাম না। ক’দিন ধরে শুনছি যে, জীব যন্তুুর শরীরে যেভাবে লোম বের হয় তেমনই শিশুটির শরীরে লোম বের হচ্ছে। বিয়ষটি কষ্টদায়ক। এরজন্য উন্নত চিকিৎসার দরকার। এজন্য আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করবে। অন্যদেরকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে’।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘ তার বাবা গরীব মানুষ। তার চিকিৎসা যেহেতু স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। আর বাইরে চিকিৎসা মানেই ব্যয়বহুল। আমরা প্রশাসনের পক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। অর্থাভাবে তার চিকিৎসা যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে চেষ্টাই করা হবে প্রশসানের পক্ষ থেকে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩১-০৮-১৯
উত্তরের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনাববগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের নাচোল উপজেলা পরিষদের ‘গা ঘেষে’ থাকা গোডাউনপাড়ার মাত্র চার বছর তিন মাস বয়সী তাসফিয়া জাহান মুনিরা এলাকার আর ৫টা শিশুর মতই চলাফেরা করে। অন্য শিশুদের মতো সেও পাড়াজুড়ে ঘুরে বেড়ায়, সমবয়সীদের সঙ্গে নাচ করে, গান করে। জামাপড়া অবস্থায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে সে আর অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক নয়, শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রণাময় বিরল একরোগ।
মুনিরার মা তানজিলা খাতুন বলেন, ‘ জন্মের পরপরই তেমন কিছু বোঝা না গেলেও মাত্র তিন দিনের মাথায় শিশুটির পিটের দিকে চামড়ায় চিড় ধরেছিল ফেঠে গেছিল। ফাটার পরে চর্বির মত একধরণের মাড়ের মতন আঠালো রস বের হতো। রসটা খুব গন্ধ করতো। ওই অবস্থায় ছয় দিনের শিশুকে নিয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসা করার পর আরাম হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর দেখা দেয় এবং পিটের দিকে টিউমার সাদৃশ্য একটি অংশের সৃষ্টি হয়। কালচে বর্ণের ওই টিউমার সাদৃশ্য অংশে লোম বের হওয়া শুরু হয় যা পর্যায়ক্রমের ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শরীরজুড়ে’।
তানজিলা বলেন, ‘ দিনের বেলায় মুনিরা খেলে বেড়ার কারণে হয়তো যন্ত্রণা বুঝতে পারেনা। কিন্তু রাত নামলেই যন্ত্রণায় ছটফট করে। হাত দিলে দেখি শিশার মত তাপ বের হয়। তখন পানি দিয়ে ধুয়ে দিই। রাতে না ঘুমিয়ে সারারাত বাতাস করি তাতে যদি ওর যন্ত্রণা কমে’।
দিনে দিনে মুনিরার বয়স বাড়ছে। এখন সে তার মাকে প্রশ্ন করে, ‘ মা, আমার শরীরে এগুলো কি বের হচ্ছে’।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা তানজিলা বলেন, ‘ সন্তানে এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারিনা। বলি, আল্লাহ দিয়েছে আল্লাহই ভাল করে দিবে’।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান মুনিরার পিতা মাসুদুজ্জামান মামুন জানান, প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার করা হয়েছিল। পরে তারা খরচ হবে অনেক উল্লেখ করে ঢাকা নিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন লাখ দেড়েক টাকা খরচের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু টাকা অভাবে ওই চিকিৎসা করাতে পারেন নি তারা। স্থানীয়ভাবে হোমিও চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটির শরীরের লোমশ অংশ মাথার ঘাড় থেকে পায়ের দিয়েও ছড়িয়ে পড়ছে। আবার টিউমার সাদৃশ্য অংশটাও বড় হচ্ছে। এনিয়ে আতংক তাড়া করছে পরিবারকে।
মাসুদুজ্জামান মামুন সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘ আমার কোন বোন নেই তাই আল্লাহ’র কাছে কন্যা সন্তানই চেয়েছিলাম। দু’টি কন্যা সন্তান। তাদের নিয়েই সুখস্বপ্ন দেখতাম। ছোটটির কারণে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। আমি কিছু চাইনা, আমি যেন আমার মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারি সে সহযোগিতাটাই যেন সবাই করেন’।
প্রতিবেশি আবু সাঈদসহ অন্যান্যরা জানালেন, শিশুটির ভবিষৎ পরিণতির কথা ভেবে এলাকার সব মানুষেরই খুবই খারাপ লাগে। গরীব পরিবার হওয়ার কারণে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেনা। শিশুটি অন্ধাকারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যান্ত অঞ্চল নাচোলের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুলতানা পাপিয়া বলেন, ‘শিশুটিকে দেখেছি। এটি একটি রেয়ার কেস। দেড় বছর আগে বাংলাদেশে যে ডায়গনিস্ট করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে এটার একটা সিস্ট আছে। শিরো সিস্ট থেকে স্প্রেড করছে। বিরল এই রোগের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বিশেষায়িত হাসপাতালে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সেই ব্যবস্থা নেব’।
বিরল রোগে আক্রান্ত মুনিরার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন। নাচোল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু বলেন, ‘বিষয়টা আমরা আগে জানতাম না। ক’দিন ধরে শুনছি যে, জীব যন্তুুর শরীরে যেভাবে লোম বের হয় তেমনই শিশুটির শরীরে লোম বের হচ্ছে। বিয়ষটি কষ্টদায়ক। এরজন্য উন্নত চিকিৎসার দরকার। এজন্য আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করবে। অন্যদেরকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে’।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘ তার বাবা গরীব মানুষ। তার চিকিৎসা যেহেতু স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। আর বাইরে চিকিৎসা মানেই ব্যয়বহুল। আমরা প্রশাসনের পক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। অর্থাভাবে তার চিকিৎসা যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে চেষ্টাই করা হবে প্রশসানের পক্ষ থেকে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩১-০৮-১৯