মেঘলা মালিহা হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী লাকি খাতুনের মৃত্যুদন্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামো শংকবারবাটি এলাকার ফতেপুরে স্বর্ণালংকারের লোভে মর্মান্তিকভাবে দু’ শিশু সুমাইয়া খাতুন মেঘলা ও মেহেজাবিন আক্তার মালিহাকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলার রায় হয়েছে। রোববার দু’ শিশু হত্যা মামলায় মামলার প্রধান আসামী লাকি খাতুন (২২) কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত।একই মামলায় স্বর্ণকার মিজানুর রহমান পলাশকে তিন বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে।
রোববার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শওকত আলী এ রায় প্রদান করেন।
মৃতদ-প্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটি মহল্লার ইব্রাহিম আলীর স্ত্রী লাকী খাতুন (২২)। আদালত তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া আদালত আঙ্গারিয়াপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান পলাশকে (৩০) ৩ বছর সশ্রম কারাদ-, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আঞ্জুমান আরা জানান, ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নামোশংকরবাটি মহল্লার আব্দুল মালেকের মেয়ে মালিহা (৬) ও হুমায়ন কবীর বিশুর মেয়ে সুমাইয়া (৭) বেলা ১১ টার দিকে নিখোঁজ হন। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অভিযুক্ত লাকি খাতুনের বাড়ির খাটের নিচ থেকে ওই দুই শিশুর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সকালে লাকী খাতুন তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই দুই শিশুর কাছে থাকা স্বর্ণের চেইন ও দুল (বালি) আত্মসাত করতেই তাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ওই স্বর্ণালঙ্কার লাকী খাতুনের কাছ থেকে ক্রয় করেন মিজানুর রহমান পলাশ। এ ঘটনায় শিশু মালিহার পিতা আব্দুল মালেক  বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
সদর থানার পরিদর্শক চৌধুরী যোবায়ের আহমেদ ওই বছরের ৩০ এপ্রিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন।

ঘটনার ফিরে দেখা-
২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নামোশংকবাটির ছোটমনি বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী  নামোশংকরবাটী ফতেপুর মহল্লার মেহজাবিন আক্তার মালিহা ও সুমাইয়া খাতুন মেঘলা সকালে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে অন্যান্য দিনের মত বাড়ির সামনে খেলাধূলা করতে বের হয়েছিল। এরপর হটাৎ নিখোঁজ। নিখোঁজের সময় শিশু ২টি গলায় স্বর্ণের চেন ও কানের দুল ছিল। পরে তাদের খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শিশু দুটি পরিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় জিডি করেন। এলাকাবাসী সন্দেহভাজন হিসেবে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীকে পুলিশ সোপার্দ করে। চলে খোঁজাখুজি। নিখোঁজের  ২দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারী বিকেলে প্রতিবেশী লাকীর বাড়ির একটি ঘরে খাটের নিচে দুটি পৃথক বস্তায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা ও পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিনই আটক হয় লাকি খাতুন। সদর থানায় দায়ের হয় হত্যা মামলা।
১৬৪ ধারায় লাকি খাতুন যা বলেছিলেন-


১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য লাকিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোর্পাদ করা হয়। জবানবন্দি দেয়ার পর বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, রোববার লাকি আক্তারের বাড়ির সামনে লাকির মেয়েসহ মেঘলা মালিহা খেলা করছিল। আগে থেকে ঋণগ্রস্থ থাকা লাকি মেঘলা মালিহার দেহে থাকা স্বর্ণালংকার দেখে লোভ হয় এবং তাদেরকে বাড়ির মধ্যে ডেকে নেয়। বাড়ির মধ্যে নিয়ে গিয়ে লাকি মেঘলার দেহে থাকার কানের দুল গলার চেন এবং মালিহার কানের দুল খুলে নেয়। এরপর তাদেরকে বাড়ির মধ্যেই আটকে রাখে। রোববার রাতে লাকি মেঘলা মালিহাকে সঙ্গে নিয়েই ঘুমায়। পরের দিন সোমবার তাদেরকে দিনভর বাড়ির ঘরের মধ্যে থাকা ফ্রিজের পেছনে আটকে রাখে। ওইদিন রাতে তারা ব্যাপক বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে লাকি আক্তার তার ঘরের সোয়ার বঙ্খাটের ভেতরে ঢুকিয়ে আটকে দেয়। বঙ্খাটের ভেতরেই তারা মারা যায়। মঙ্গলবার সকালে বঙ্খাট খুলে তাদেরকে মৃত দেখে লাকি দুশিশুকে বস্তাবন্দি করে পাশের শশুড়ের ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।
১৬৪ ধারায় লাকি জানায়, মেঘলা মালিহার দেহে থাকা স্বর্ণালংকার ১২ আনা রতি স্বর্ণালংকার প্রায় ২১ হাজার টাকায় একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে। বিক্রি করা সেই ২১ হাজার টাকার বড় অংশ বিভিন্ন পাওনাদারকে পরিশোধ করে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৫-০৮-১৮