৭১ এর ৮ অক্টোবর > বাবা হত্যার কাহিনী শুনালেন ছেলে

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন ৮ অক্টোবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পাক হানাদার বাহিনীর দল  বাড়ির দরজা ভেঙ্গে আমার বাবাকে বাড়ি উঠানে দাঁড় করিয়ে বুকে অস্ত্র ধরে বলতে বলে বল পাকিস্তান জিন্দাবাদ প্রতিউত্তরে আমার বাবা বলেছিলেন, জয়-বাংলা। এরপর প্রায় ১ ডজন গুলি বাবার দেহটাকে ঝাঝরা করে ফেলে। লুটিয়ে পড়েন বাবা। হত্যার পর চলে যায় হানাদার বাহিনী। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। শুধু নিরবে তাকিয়ে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। আমার মা ওই সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে হয়েছিলেন শারিরীক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত। স্বাধীনতার ৪৬ বছর ধরে সেই দৃশ্য অসহ্য যন্ত্রনার কারণ হয়ে আছে। ৮ অক্টোবর এলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই দৃশ্য আর বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে উঠে। ভুলতে পারিনা বাবাকে, সেই সঙ্গে বাবার হত্যাকান্ড। কান্না জর্জরিত কন্ঠে কথাগুলো বললেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের শহীদ আব্দুল বারী চৌধুরীর বড় সন্তান আবু হায়দার চৌধুরী।
সেদিনের স্মৃতি মনে করে আবু হায়দার চৌধুরী বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর দাফনের জন্য শান্তি কমিটির সদস্যর কাছে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানাজা পড়াতে ও দাফন করাতে রাজি হননি। আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিন দিন পরে রাতের অন্ধকারে আমার আত্মীয়রা গোপনে জানাজা, কাফন ও পাটাতন ছাড়াই দাফন করে হয় আমার বাবাকে।
সনামধোন্য চৌধুরী পরিবারের সন্তান আব্দুল বারী চৌধুরী ইপিআর বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ সালে স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে চলে আসেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী করায় ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দার করার কারণে বাজিতপুর গ্রামের রাজাকার শাহজাহানের উপস্থিতিতে পাকবাহিনিরা এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করলেন আবু হায়দার চৌধুরী।
শহীদ পরিবারের লোকজন জানান, শুধু আব্দুল বারী চৌধুরী নয়, সোহরাব হোসেন, আফতাব চৌধুরী, মিন্টু চৌধুরী, কয়েশ আলীসহ ১০জন স্বাধীনতাকামী নিরিহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং তাদের একইভাবে দাফন করা হয়। যা বর্তমানে শুধুই স্মৃতি।
৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা একে নূরুনব্বী ও প্রয়াত আবু জোসনার বরাত দিয়ে অন্যান্য শহীদ পরিবারের লোকজন আরও জানান, যুদ্ধকালীন শহীদগণ মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পরিবেশনসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করার কারণে তৎকালীন শ্যামপুর ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যনসহ শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনীর দল ১৯৭১ সালে ৮ অক্টোবার এই নির্মম হত্যাকান্ড চালায়।

শহীদ সোহরাব হোসেনের ছেলে বাবুল হোসেন জানান, যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদের প্রচেষ্টায় শ্যামপুর ইউনিয়নের ১০ শহীদ পরিবারকে ১ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছিল। তারপর আর কেউ কোন দিন খোঁজ নেননি। তিনি সরকারের কাছে এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।
মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের শহীদ মুসলিম উদ্দিনের ছেলে বদিউর রহমান বুদ্ধু জানান, ঘটনাটি অত্যান্ত বেদনাদায়ক ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৮-১০-১৭