সিসি ক্যামেরায় লাভ কি?

‘নিরাপত্তা’ এমন একটি আকাংখার যায়গা থেকে আমাদের দেশে বেশ ক’বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরার ব্যবহার। পশ্চিমা তথা উন্নত বিশ্বে ব্যাবহারের ফলাফল কিংবা ধারণা ধার করে আমাদের দেশে ঢোকানো হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এই সিসি ক্যামেরা। দিনে দিনে বাড়ছে এর ব্যবহার। সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারতো হচ্ছেই এর বাইরেও নানান কাজে ব্যবহার হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। এমনকি বাড়ির বউ কি করছেন তা পরখ করার জন্য গৃহকর্তা বাড়িতেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছেন এমন খবরও শোনা গেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক গোপন ক্যামেরায় অনেক কিছুই পরখ করা যাচ্ছে এবং হচ্ছে।
জনগনের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধী সনাক্ত করতে অফিস, প্রতিষ্ঠান এমনকি বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে সিসি ক্যামেরা রাস্তায় এসেছে সেও বহু আগে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকা-ের ঘটনায় গণমাধ্যমগুলোতে বারবারই দেখানো হয়েছিল রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। অতি সম্প্রতি দেশের ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম পুরো ময়মনসিংহ শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছেন এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে দেখাগেছে। ঠিক এমনই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম। ক্রমান্বয়ে পুরো শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে এমনটাই স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
জনগন ও তার জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধী সনাক্ত করতে লাগানো সিসি ক্যামেরা, কি নিরাপত্তা দিবে? বা যদি এমনভাবে বলা যায়, সিসি ক্যামেরা কি আসলে নিরাপত্তা দিতে পারে? এর উত্তর অবশ্যই না। সিসি ক্যামেরা নিরাপত্তা কাজে সহায়তা করবে। ধরা যাক সিসি ক্যামেরা থাকা অবস্থায় চুরি হল, অপরাধ হল, মানুষ খুন হল। সিসি ক্যামেরায় অপরাধী সনাক্ত করা গেল, কিন্ত যা হবার তাতো হয়ে গেল। মানুষতো খুন হয়েই গেল।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্র ক্লাব সুপার মার্কেটের প্রধান গেটের সামনে প্রেসক্লাবের নিচের একটি মোবাইল ব্যাংকিং-এর দোকানে দুর্ধষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই চুরির ঘটনাটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চোরদের আসা, যাওয়া ও চুরির ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ক্যামেরা ফুটেজে চোরদের কর্মকান্ড দেখা গেল কিন্তু লাভ কি হল, চুরিতো হয়েই গেল। অতএব, আমাদের কাছে পরিস্কার সিসি ক্যামেরা নিরাপত্তা দিবেনা, প্রতিরোধও করবেনা এটাই সত্য। তবে, নিরাপত্তা ও প্রতিরোধের লক্ষে অপরাধী সনাক্তে সহায়তা করবে।
অপরাধ কর্মকা- ও অপরাধী সনাক্তের জন্য লাগানো সিসি ক্যামেরা ও তার ফুজেট যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি যথাযথভাবে কাজে না লাগান তা হলে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে লাভটা কি? সিসি ক্যামেরার পেছলে ব্যয় করা লাখ লাখ টাকা কি অপবায়ের আওতায় পড়ছেনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের নিচের দোকানের মালিক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তার দোকানে চুরি হওয়ার পর শুক্রবার রাতে তিনি থানায় এজাহার দাখিল করেছেন এবং সেই সঙ্গে ক্লাব সুপার মার্কেটে থাকা দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করেছেন। সরবরাহ করা ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দু’জন চোর ভোর রাত ৪টা ৫৮ মিনিটে মুক্ত মহাদলের সামনে দিয়ে টাউন ক্লাবের দিকে গেল। এরপর ক্লাব সুপার মার্কেটের নাইট গার্ড মুক্ত মহাদলের আশেপাশে টহল দিল। ৫টা ০২ মিনিটে নাইট গার্ড মুক্ত মহাদলের সামনে থেকে চলে যাবার পর ৫টা ০৭ মিনিটে দু’ চোর হাজির হয় মডেল স্কুলের গেটের কাছে। তারপর ধীরেধীরে প্রেসক্লাবের নিচতলার দোকানে এসে চুরি করে ৫টা ১৩ মিনিটে দৌড়ে পালিয়ে যায় টাউন ক্লাবের দিকে। বেশ দূরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চোরদের চেহারা পরিস্কার পাওয়া যায়নি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্কার চেহারার ফুটেজ আছে পুলিশের কাছেই। টাউন ক্লাবের গেটের পাশের বিদ্যুতের পোলে আছে পুলিশের উদ্যোগে লাগানো সিসি ক্যামেরা। ওই ক্যামেরাটি রাস্তা থেকে খুব দূরেও নয়। ৪টা ৫৮ মিনিটে দু’চোর যখন রাস্তা দিয়ে হেটে গেল তা নিশ্চয় টাউন ক্লাবের পোলে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে। আবার দু’চোর যখন ৫টা ০৭ মিনিটে মডেল স্কুলের গেটে, সেটির ফুটেজও ওই সিসি ক্যামেরায় আছে। এখন প্রশ্ন টাউন ক্লাবের গেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ কি কাজে লাগিয়েছেন?
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের নিচের রাকা মাল্টিমিডিয়ার চুরি ঘটনার মাত্র চারদিনের মাথায় শহরের হুজরাপুরের আরেক ব্যস্ততম এলাকা পুরাতন জেলখানা সংলগ্ন আরেকটি মোবাইল ব্যাংকিং-এর দোকানে একই কায়দায় চুরি হয়েছে। এর আগে একই কায়দায় চুরি হয়েছে বাতেন খা মোড় এলাকায়। মাত্র ৫দিনের ব্যবধানে শহরের তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং এর দোকানে একই কায়দায় চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাকা মাল্টিমিডিয়ার মালিকের সরবরাহ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্রধরে যদি কাজ করতেন আর চোরেরা যদি একই সিন্ডিকেটের হয় তাহলে পুরাতন জেলখানার মোড়ের চুরির ঘটনা হয়তো ঘটতোনা।
দেশে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে যেমনটা দেখা যায় (যেমন, বিশ্ব ইজতেমা, ঈদগাহ ময়দান, বড় বড় জনসমাবেশে) লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য মনিটরিং করছেন। এমনটা কি চাঁপাইনবাবগঞ্জে আছে। যদি থাকতো তাহলেতো তিনি সিসি ক্যামেরা মনিটরে দেখতে পাওয়া সন্দেহজনক ব্যক্তির চলাচল রাতে টহলে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সুনির্দিষ্ট এলাকার নাম উল্লেখ করে অবহিত করতে পারতেন। মনে হয় নেই, আর থাকলেও নির্জীব!
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ নাগরিক ও ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেছেন, ‘চার দিন আগে জমা দেয়া ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ তাদের নিজস্ব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যদি কাজে না লাগান। আবার রাস্তার পোলে পোলে পুলিশের লাগানো সিসি ক্যামেরা মনিটর করা না হয়, তবে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে লাভ কি?’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ শহীদুল হুদা অলক/ ২৪-১০-১৭












,